পবিত্র রোজা ইনশাআল্লাহ শুরু হবে খুব শীঘ্রই। পুরো একটি মাস সংযমের সঙ্গে সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য আমাদের অনেক রকম প্রস্তুতি নিতে হয়। রোজায় খাবারের ধরন, সময়, পরিমাণ ও পরিবেশন পরিবর্তিত হলেও দৈনিক পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা অপরিবর্তিত থাকে। তাই সুস্থভাবে সবগুলো রোজা পালন করতে হলে সঠিক খাবারের পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
ইফতার
রোজা ভাঙার পর প্রথম খাবারই হলো ইফতার। আজানের পর একটি বা দুটি খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা ভালো। এর সঙ্গে এমন কিছু পানীয় গ্রহণ করুন যা শরীরে শক্তি জোগাবে ও ইলেক্ট্রোলাইটের চাহিদা পূরণ করবে।
সুস্থকরপানীয়:
- ঘরে তৈরি চিনি ছাড়া ফলের জুস
- ডাবের পানি
- দই ও ফলের স্মুদি
- আখের গুড়ের শরবত
- লেবু-মধু পানি
- লাচ্ছি
- তোকমা বা ইসুবগুলের শরবত
- চিড়ার শরবত
এরপর ঘরে তৈরি হালকা ভাজা খাবার এপেটাইজার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে, তবে প্রতিদিন না খাওয়াই ভালো। এরপর এমন একটি স্বাস্থ্যকর মূল খাবার গ্রহণ করুন যা থেকে সব ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায়। যেমন:
সুস্থকর মূল খাবার:
- ঘরে তৈরি খিচুড়ি ও ডিম
- সবজি ও মাংসের খিচুড়ি
- রুটি, সবজি ও ডিম
- লাইট ভাত ও তরকারি
- এগ ভেজিটেবল নুডলস
ডেজার্ট হিসেবে মিশ্র ফল বা দুধজাত খাবার খাওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখবেন, খাবার যেন ঘরে তৈরি ও পরিমাণে বেশি না হয়।
সেহরি
রোজায় সেহরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই সেহরি খেতে চান না বা অনেক আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে রোজার সময় দীর্ঘ হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, পানির পিপাসা, মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সেহরি গ্রহণ করা উচিত।
সেহরির জন্য উপযুক্ত খাবার:
- ভাত, মাছ, নরম সবজি ও মুরগি
- রুটি, দুধ ও কলা
- ওটস বা সিরিয়াল
সেহরিতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি।
এড়িয়ে চলুন: মিষ্টি, ভাজাপোড়া, বেকারি খাবার ও প্রসেসড খাবার।
রাতের খাবার ডিনার
অনেকে ইফতারে বেশি খেয়ে রাতের খাবার এড়িয়ে যান, যা ঠিক নয়। ইফতার পরিমিত পরিমাণে খেয়ে তারাবির নামাজের পর একটি লাইট ডিনার করা উচিত।
সুস্থকর রাতের খাবার:
- চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ
- দুধ ও সিরিয়াল
- রুটি, সবজি ও ডিম
- ওটস ও দুধ
- সবজি, মাছ বা মুরগির হালকা রান্না করা খাবার
রোজায় করণীয় পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত শরীর হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরি।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তারা- ইসুবগুল, তোকমা, শাকসবজি ও ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখবেন।
এড়িয়ে চলুন- ভাজাপোড়া, রঙিন খাবার, প্রতিদিন হালিম, জিলাপি, বাইরের কমার্শিয়াল জুস ইত্যাদি।
নির্দিষ্ট রোগ থাকলে- রোজার আগে ডাক্তার ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
সঠিক পরিমাণে ঘুম সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।সঠিক খাবার ও সঠিক রুটিন মেনে চলুন, পরিবারের সঙ্গে সুস্থভাবে রোজা পালন করুন।
লেখকঃ
তামান্না চৌধুরী
প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান
ডায়েটিক্স এবং পুষ্টিবিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।