রোজায় সাস্থ্যকর পানীয়

চলছে পবিত্র মাহে রমজান।এই রোজায় আমাদের সুস্থ ভাবে রোজা সম্পন্ন করা, এনার্জিটিক থাকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি করার লক্ষ্যে সঠিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন অনেক জরুরি।

রোজা ভাঙার পর প্রথম খাবার হলো ইফতার। রকমারি ও সুষম পুষ্টি উপাদান দিয়ে সাজাতে হয় তাই ইফতার। পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভেংগে সবাইকে একটি তরল খাবার খেতে হয়। এই তরল খাবারটি  পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ, সহজলভ্য,  সঠিক ও স্বাস্থ্যকর তরল হওয়া জরুরি।

এনার্জি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ নীচে বেশ কিছু সাস্থ্যকর তরল খাবার তুলে ধরা হলো।

ফলের রস

মৌসুমী ফল দিয়ে ঘরে করা ফলের জুস এনার্জি আর ইলেক্ট্রলাইটস এর একটি দারুণ উৎস। এক্ষেত্রে সহজলভ্য যেকোনো মৌসুমি ফল দিয়ে জুস করে খেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও ইন্সট্যান্ট এনার্জি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে নরম পাকা ফল বেছে নিলে ভালো। ব্লেন্ডারে না করে হাতে চটকিয়ে বা ম্যানুয়াল মেশিনে করলে ফলের ফাইবার কিছুটা থাকে। চটকানো ফলের সাথে বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে বানানো হয় ফলের রস। ব্লেন্ডারে করলে না ছেঁকে বানাতে হয় ফলের জুস। বড়দের জন্য চিনি না মেশানো ভালো তবে বাড়ির ছোট সদস্যদের জন্য ফলের রসে গুড় বা লাল চিনি বা তাল মিস্রি বা মধু মেশালে ভালো।

একটু লেবুর রস মেশালে যেকোন ফলের রসে ভিটামিন সি যুক্ত হয় আর স্বাদ অনুযায়ী সামান্য লবন মিশালে শরীরে সোডিয়াম এর ঘাটতি পূরন হয়।

ডায়বেটিক রোগীরা পরিমান মত ফল পানির সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়া জুস করে পরিমিত পারিমানে খেতে পারবে।

নানা রকম ফল দিয়ে করা হয় জুস।আম, বাংগি,  তরমুজ,  পাকা পেপে,  বেল,  লেবু, কমলা,  মালটা,  আনারস,  জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের রস খুব উপকারী। লেবুর শরবত মধু বা আখের গুড় দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।ফলের জুসে তোকমা বা চিয়া সিডস মিশিয়ে নিলে তা আরো পুষ্টিকর হয়।

ডাবের পানি

এটি সতন্ত্র একটি সাস্থ্যকর পানিয়। যাতে কিছু মেশানোর প্রয়োজন হয়না। ব্যালেন্স ক্যালরি আর পর্যাপ্ত পটাশিয়াম এ ভরপুর এই ডাবের পানি রোজায় মেডিসিনের কাজ করে। রোজায় অনেকের রক্তে পটাশিয়াম কমে যাওয়ার প্রবনতা দেখা দেয়। তাদের জন্য ইফতারে এটি খুব ভালো পানিয়। যাদের ডায়বেটিস অনিয়ন্ত্রিত তাদের জন্য খুব ভালো কারন এতে ক্যালরি কম আর সেই জন্য যারা ওজন কমানোর ডায়েটে আছে তাদের জন্য এই পারফেক্ট তরল। উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ওবেসিটি ও ডায়বেটিক রোগীদের জন্য এটি খুব হেলদি।

লাচ্ছি

টক ও মিষ্টি দুই ধরনের লাচ্ছি খুব উপকারী। লাচ্ছিতে পানির সাথে টক বা মিষ্টি দই, পানি ও লবন বা বীট লবন, চাট মশলা ইত্যাদি দিয়ে করা হয়। দই এর লাচ্ছিতে দই মূল উপাদান তাই এই রেসিপি থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন,  ক্যালসিয়াম,  ফসফরাস,  প্রো বায়োটিক সহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

অনেকে দুধ সহ্য না করতে পারলেও লাচ্ছি হজম করতে পারে তাই তাদের জন্য রোজায় এটি পারফেক্ট তরল। ডায়বেটিক রোগী, হার্টের রোগী, অস্টিওপরোসিস বা যারা ওজন সমস্যায় ভুগছে তাদের জন্য টক দই এর লাচ্ছি ভালো। গর্ভবতী মা, কম বয়সী,  যাদের ওজন কম, যাদের দূর্বলতা আছে তাদের জন্য মিষ্টি লাচ্ছি উপকারী।

কলার স্মুদি

দুধ বা দই এর সাথে কলা ব্লেন্ড করে মূলত ঘন স্মুদি করা হয়। কলার পুষ্টির পাশাপাশি দই বা দুধের সব পুষ্টি এই  এক গ্লাস স্মুদি থেকে পাওয়া সম্ভব।  এই স্মুদিকে আরো পুষ্টিকর করতে এর সাথে মধু যুক্ত করা যেতে পারে। এই রেসিপিটি থেকে প্রোবায়োটিক এর পাশাপাশি জিংক,  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,  ক্যালসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যাবে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

লেবু আর পুদিনার জুস

কুচি লেবু,  লেবুর রস, পুদিনা,  লবন,  সামান্য সুগার সিরাপ বা মধু মিক্স করে করা হয় লেমন মিন্ট লেমনেড বা লেবু পুদিনার জুস। এই তরল খুবই রিফ্রেশমেন্ট দেয়। পটাসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট এর এক পারফেক্ট তরল। তবে যাদের ডায়বেটিস আছে তারা সুগার বাদ দিয়ে ডায়েট চিনি দিয়ে এটি উপভোগ করতে পারবে। এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা আছে তারা এড়িয়ে চলাই ভালো।

রুহাফজার শরবত

রুহাফজা অনেককাল থেকেই বাংগালীদের রোজায় এক প্রিয় শরবত। সব শ্রেণির মানুষের জন্য এটি সাধারণ পানিয়। রুহাফজা অনেক ফলের ঘন সিরাপ তাই এতে পানি ছাড়া আর কিছু মিশাতে হয়না। তবে এই রুহাফজাকে সাস্থ্যকর করতে এর সাথে ইসুবগুল বা তোকমা মেশানো হলে তা অনেক উপকারী হয়। যাদের এনার্জি কম, কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য এই উপায়ে খেলে ভালো।

আখের গুড়ের শরবত

এটিও সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি পানীয়। আখের গুড়ের সাথে পানি ও সামান্য লেবু ও চাইলে এক চিমটি লবন দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে এই শরবত। প্রায় স্যালাইন এর মত কাজ করবে এই শরবত। যাদের রোজাতে দূর্বল লাগে, মাংসপেশিতে টান লাগে, রক্তের সোডিয়াম বা সুগার কমে যায় তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।

তরল খাবারটি সাস্থ্যকর করার জন্য ঘরের তৈরি তরলের কোন বিকল্প নেই। কমার্শিয়াল ক্যান বা বোতল জাত তরল এড়িয়ে চললে ভালো। যেকোন তরল খাবারকে হেলদি করতে চিনি ও রঙ পরিহার করুন।

মধু, তোকমা, ইসুবগুল, লেবুর রস, পুদিনা পাতা,সামান্য লবন ইত্যাদি খাদ্য উপাদান যোগ করে আপনার বানানো তরলকে আরো হেলদি করুন।  পরিবারের সবাই যাতে এই রোজায় হাইড্রেট থাকে সেই চেষ্টাই করুন।

 

লেখকঃ

তামান্না চৌধুরী

প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান

ডায়েটিক্স এবং পুষ্টিবিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।