স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অন্যতম শর্তের মধ্যে পড়ে স্বাস্থ্যকর ঘুম। মানে গভীর ঘুম। বলা হয়, প্রতিরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে আসবে জীবনীশক্তি। ঘুম না হলে স্ট্রেস ভর করবে, শারীরিক গঠন নষ্ট হবে এবং অস্বস্তিবোধ হবে। নিদ্রা সংক্রান্ত ব্যাধিগুলি এমন, যা ঘুমের গুণমান, সময় এবং স্থিতি প্রভাবিত করে, ফলে দিনের মধ্যে ক্লান্তি ও স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে প্রধান ঘুমজনিত ব্যাধি দেওয়া হলো:
অনিদ্রা (Insomnia)
ঘুম আসতে দেরি হওয়া, বারবার জেগে ওঠা বা খুব তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা। এটি স্বল্পমেয়াদী (Acute) বা দীর্ঘমেয়াদী (Chronic) হতে পারে। সাধারণত দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ বা জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণে হয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)
ঘুমের সময় বারবার শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA): গলায় পেশি শিথিল হয়ে শ্বাসরোধ হওয়া। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (CSA): মস্তিষ্ক শ্বাস-প্রশ্বাসের সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়।
লক্ষণ: উচ্চস্বরে নাক ডাকা, হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, অতিরিক্ত দিনের ঘুমঘুম ভাব।
নারকোলেপসি (Narcolepsy)
অতিরিক্ত দিনের ঘুমঘুম ভাব ও হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়া।
ক্যাটাপ্লেক্সি (Cataplexy): হঠাৎ পেশী দুর্বল হয়ে পড়া। এটি ঘুম ও জাগরণের চক্র নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের অক্ষমতার কারণে ঘটে।
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম (Restless Legs Syndrome – RLS)
বিশেষ করে রাতে, পায়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং তা নাড়িয়ে নেওয়ার প্রবণতা। ফলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
সার্কাডিয়ান রিদম স্লিপ ডিসঅর্ডার (Circadian Rhythm Sleep Disorders)
শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা।
প্রকারভেদ:
ডিলেইড স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডার (DSPD): খুব দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে জাগা।
অ্যাডভান্সড স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডার (ASPD): খুব তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি জাগা।
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার: নাইট শিফট বা পরিবর্তিত শিফটের কারণে ঘুমের সমস্যা।
জেট ল্যাগ ডিসঅর্ডার: সময় অঞ্চলের পরিবর্তনের কারণে ঘুমের সমস্যা।
প্যারাসমনিয়া (Parasomnias)
ঘুমের সময় অস্বাভাবিক আচরণ।
উদাহরণ:
স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking): ঘুমের মধ্যে হাঁটা বা কাজ করা।
স্লিপ টকিং (Sleep Talking): ঘুমের মধ্যে কথা বলা।
নাইট টেরর (Night Terrors): ঘুমের মধ্যে আকস্মিক আতঙ্ক ও চিৎকার।
আরইএম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার (RBD): স্বপ্ন অনুযায়ী বাস্তবে শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখানো।
হাইপারসমনিয়া (Hypersomnia)
পর্যাপ্ত ঘুমের পরও অতিরিক্ত ঘুমঘুম ভাব। এটি বিভিন্ন চিকিৎসা সমস্যার কারণে হতে পারে।
ব্রুক্সিজম (Bruxism – Teeth Grinding)
ঘুমের সময় অজান্তে দাঁত ঘষা। এটি চোয়ালের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।
স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis)
ঘুম থেকে জাগার সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার সময় শরীর নাড়াতে না পারা। অনেক সময় এটি ভৌতিক অনুভূতি বা কল্পনার সাথে যুক্ত থাকে।
নকটর্নাল এনুরেসিস (Nocturnal Enuresis – Bedwetting)
ঘুমের সময় অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
চিকিৎসার উপায়:
জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা, মানসিক চাপ কমানো।
চিকিৎসা: স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য CPAP মেশিন, নারকোলেপসি বা RLS-এর জন্য ওষুধ।
সাইকোলজিক্যাল থেরাপি: বিশেষ করে অনিদ্রার জন্য সগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) কার্যকর।
লেখক:
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর