রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসার আরেক উপায়

রেডিওথেরাপি, ক্যান্সার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা উচ্চ শক্তির রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস বা ছোট করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। এটি সাধারণত ক্যান্সারের আক্রান্ত এলাকায় সরাসরি রেডিয়েশন প্রেরণ করে, যাতে কোষের ডিএনএ-তে ক্ষতি হয় এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাধারণত এককভাবে অথবা কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের সঙ্গে একত্রে ব্যবহৃত হয়।

রেডিওথেরাপি কাজ করে ক্যান্সার কোষের ডিএনএ ধ্বংস করে, ফলে কোষটি বিভাজিত হতে পারে না এবং বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এই রেডিয়েশন সাধারণত এক বা একাধিক সেশনে প্রয়োগ করা হয়, এবং এটি অত্যন্ত লক্ষ্যভিত্তিকভাবে ক্যান্সার কোষে প্রেরিত হয় যাতে আশপাশের সুস্থ কোষ কম আক্রান্ত হয়। তবে, কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পরতে পারে, তবে বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাময়িক এবং চিকিৎসার শেষে সেরে যায়।

রেডিওথেরাপি দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে:

  1. এক্সটার্নাল রেডিওথেরাপি (External Beam Radiotherapy): এই ধরনের রেডিওথেরাপি বাহ্যিক যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে রেডিয়েশন প্রেরণ করা হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি, যেখানে রেডিয়েশন সরাসরি ক্যান্সারের জায়গায় লক্ষ্য করা হয়।
  2. ইন্টার্নাল রেডিওথেরাপি (Brachytherapy): এই পদ্ধতিতে রেডিয়েশন সরাসরি ক্যান্সারের টিউমারের ভিতরে বা কাছাকাছি স্থানে ইমপ্ল্যান্ট করা হয়। এটি সাধারণত প্রোস্টেট ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের চিকিত্সার একটি কার্যকরী উপায়, বিশেষত যখন কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ কার্যকরী না হয়। এটি টিউমার সাইজ ছোট করতে এবং মেটাস্ট্যাসিস (ক্যান্সারের বিস্তার) রোধ করতে সাহায্য করে। তবে, এটি সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য উপযুক্ত নয় এবং রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়।

এছাড়া, রেডিওথেরাপি সাধারণত রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং ক্যান্সারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়, এবং এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

কিডনি রোগ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন, পানি ও খনিজের ভারসাম্য রক্ষা এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণের কাজ করে। তবে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

কিডনি রোগের কারণ:

কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, পানির অভাব, ধূমপান, স্থূলতা এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করাও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও কিডনি রোগ হতে পারে।

কিডনি রোগের লক্ষণ:

কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে রোগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে—

  • অবিরাম ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • খাবারে অরুচি ও বমিভাব
  • প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত দেখা যাওয়া
  • হাত-পা ও মুখমণ্ডলে ফোলা
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া

প্রতিরোধ প্রতিকার:

  • ব্যায়াম বা শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত চেক করুন।
  • ধূমপান করবেন না।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • নিয়মিত অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করবেন না।
  • পুষ্টিকর খাবার খান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • উচ্চ রক্তচাপ অথবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে, কিডনি পরীক্ষা করান।

কিডনি সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

লেখকঃ

ডা. তাবাসসুম সামাদ

কনসালটেন্ট

নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, যা সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা অনুসরণ করে প্রতিরোধ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং পুষ্টি উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম।

প্রথমত, ফল ও সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষত, টমেটো, ব্রকলি, গাজর, শাকসবজি এবং নানা ধরনের ফল, যেগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, শরীরের কোষের ক্ষয় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম, কোষের ডিএনএ কে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শস্যদানা, শাকসবজি, ফলমূল, এবং বাদাম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ফাইবার শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

তাছাড়া, গরু বা মুরগির মাংসের অতিরিক্ত খাওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ, হ্যাম) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি প্রোটিনের পরিবর্তে আরও সবুজ শাকসবজি, মাছ, এবং ভেজিটেরিয়ান প্রোটিন যেমন ডাল, সয়া পণ্য খাওয়া উচিত।

অপরদিকে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়া সঠিক রাখা সম্ভব।

অবশেষে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, শর্করা কম খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে দূরে থাকা এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ব্রেইন টিউমার: যথাযথ চিকিৎসায় নিরাময়

ব্রেইন টিউমার হলো মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি দুটি ধরণের হতে পারে— (Benign), যা ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত ক্ষতিকর নয়, এবং (Malignant), যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ক্ষতিকর এবং শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।।

ব্রেইন টিউমারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে জেনেটিক মিউটেশন, মস্তিষ্কে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, এবং কিছু ভাইরাল সংক্রমণকে এটি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়।

মস্তিষ্ক (Brain) মাথার শক্ত খুলি অর্থাৎ হাড়ের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে সুরক্ষিত। টিউমার যখন বদ্ধ প্রকোষ্ঠে ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে তার কারণে ব্রেইনের প্রেসার বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। মস্তিষ্কের যে অংশে টিউমার হয় সেই অংশের কার্যকারিতা বিনষ্ট হতে থাকে এবং সে অনুযায়ী উপসর্গ হয়। ব্রেইনে টিউমার ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। যত দ্রুত অপারেশন বা সার্জারি এর মাধ্যমে টিউমার অপসারণ হবে তত‌ই ব্রেইন নষ্ট হ‌ওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

উপসর্গ সমূহ

  • মাথাব্যথা
  • বমিভাব বা বমি হওয়া
  • খিঁচুনি
  • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • স্মৃতিভ্রংশ বা বিভ্রান্তি বা এলোমেলো কথা বলা
  • শরীরের কোনো অংশ দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হ‌ওয়া

চিকিৎসা নিরাময়

যদি কোনো ব্যক্তির উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত নিউরোসার্জন বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের ধরণ, আকার এবং অবস্থানের ওপর। প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি। আধুনিক চিকিৎসার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন।

 

লেখকঃ

প্রফেসর (কর্নেল) ডাঃ মুঃ আমিনুল ইসলাম (অবঃ)

সিনিয়র কনসালটেন্ট

নিউরোসার্জারী বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

রোজায় সাস্থ্যকর পানীয়

চলছে পবিত্র মাহে রমজান।এই রোজায় আমাদের সুস্থ ভাবে রোজা সম্পন্ন করা, এনার্জিটিক থাকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি করার লক্ষ্যে সঠিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন অনেক জরুরি।

রোজা ভাঙার পর প্রথম খাবার হলো ইফতার। রকমারি ও সুষম পুষ্টি উপাদান দিয়ে সাজাতে হয় তাই ইফতার। পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভেংগে সবাইকে একটি তরল খাবার খেতে হয়। এই তরল খাবারটি  পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ, সহজলভ্য,  সঠিক ও স্বাস্থ্যকর তরল হওয়া জরুরি।

এনার্জি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ নীচে বেশ কিছু সাস্থ্যকর তরল খাবার তুলে ধরা হলো।

ফলের রস

মৌসুমী ফল দিয়ে ঘরে করা ফলের জুস এনার্জি আর ইলেক্ট্রলাইটস এর একটি দারুণ উৎস। এক্ষেত্রে সহজলভ্য যেকোনো মৌসুমি ফল দিয়ে জুস করে খেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও ইন্সট্যান্ট এনার্জি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে নরম পাকা ফল বেছে নিলে ভালো। ব্লেন্ডারে না করে হাতে চটকিয়ে বা ম্যানুয়াল মেশিনে করলে ফলের ফাইবার কিছুটা থাকে। চটকানো ফলের সাথে বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে বানানো হয় ফলের রস। ব্লেন্ডারে করলে না ছেঁকে বানাতে হয় ফলের জুস। বড়দের জন্য চিনি না মেশানো ভালো তবে বাড়ির ছোট সদস্যদের জন্য ফলের রসে গুড় বা লাল চিনি বা তাল মিস্রি বা মধু মেশালে ভালো।

একটু লেবুর রস মেশালে যেকোন ফলের রসে ভিটামিন সি যুক্ত হয় আর স্বাদ অনুযায়ী সামান্য লবন মিশালে শরীরে সোডিয়াম এর ঘাটতি পূরন হয়।

ডায়বেটিক রোগীরা পরিমান মত ফল পানির সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়া জুস করে পরিমিত পারিমানে খেতে পারবে।

নানা রকম ফল দিয়ে করা হয় জুস।আম, বাংগি,  তরমুজ,  পাকা পেপে,  বেল,  লেবু, কমলা,  মালটা,  আনারস,  জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের রস খুব উপকারী। লেবুর শরবত মধু বা আখের গুড় দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।ফলের জুসে তোকমা বা চিয়া সিডস মিশিয়ে নিলে তা আরো পুষ্টিকর হয়।

ডাবের পানি

এটি সতন্ত্র একটি সাস্থ্যকর পানিয়। যাতে কিছু মেশানোর প্রয়োজন হয়না। ব্যালেন্স ক্যালরি আর পর্যাপ্ত পটাশিয়াম এ ভরপুর এই ডাবের পানি রোজায় মেডিসিনের কাজ করে। রোজায় অনেকের রক্তে পটাশিয়াম কমে যাওয়ার প্রবনতা দেখা দেয়। তাদের জন্য ইফতারে এটি খুব ভালো পানিয়। যাদের ডায়বেটিস অনিয়ন্ত্রিত তাদের জন্য খুব ভালো কারন এতে ক্যালরি কম আর সেই জন্য যারা ওজন কমানোর ডায়েটে আছে তাদের জন্য এই পারফেক্ট তরল। উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ওবেসিটি ও ডায়বেটিক রোগীদের জন্য এটি খুব হেলদি।

লাচ্ছি

টক ও মিষ্টি দুই ধরনের লাচ্ছি খুব উপকারী। লাচ্ছিতে পানির সাথে টক বা মিষ্টি দই, পানি ও লবন বা বীট লবন, চাট মশলা ইত্যাদি দিয়ে করা হয়। দই এর লাচ্ছিতে দই মূল উপাদান তাই এই রেসিপি থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন,  ক্যালসিয়াম,  ফসফরাস,  প্রো বায়োটিক সহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

অনেকে দুধ সহ্য না করতে পারলেও লাচ্ছি হজম করতে পারে তাই তাদের জন্য রোজায় এটি পারফেক্ট তরল। ডায়বেটিক রোগী, হার্টের রোগী, অস্টিওপরোসিস বা যারা ওজন সমস্যায় ভুগছে তাদের জন্য টক দই এর লাচ্ছি ভালো। গর্ভবতী মা, কম বয়সী,  যাদের ওজন কম, যাদের দূর্বলতা আছে তাদের জন্য মিষ্টি লাচ্ছি উপকারী।

কলার স্মুদি

দুধ বা দই এর সাথে কলা ব্লেন্ড করে মূলত ঘন স্মুদি করা হয়। কলার পুষ্টির পাশাপাশি দই বা দুধের সব পুষ্টি এই  এক গ্লাস স্মুদি থেকে পাওয়া সম্ভব।  এই স্মুদিকে আরো পুষ্টিকর করতে এর সাথে মধু যুক্ত করা যেতে পারে। এই রেসিপিটি থেকে প্রোবায়োটিক এর পাশাপাশি জিংক,  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,  ক্যালসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যাবে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

লেবু আর পুদিনার জুস

কুচি লেবু,  লেবুর রস, পুদিনা,  লবন,  সামান্য সুগার সিরাপ বা মধু মিক্স করে করা হয় লেমন মিন্ট লেমনেড বা লেবু পুদিনার জুস। এই তরল খুবই রিফ্রেশমেন্ট দেয়। পটাসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট এর এক পারফেক্ট তরল। তবে যাদের ডায়বেটিস আছে তারা সুগার বাদ দিয়ে ডায়েট চিনি দিয়ে এটি উপভোগ করতে পারবে। এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা আছে তারা এড়িয়ে চলাই ভালো।

রুহাফজার শরবত

রুহাফজা অনেককাল থেকেই বাংগালীদের রোজায় এক প্রিয় শরবত। সব শ্রেণির মানুষের জন্য এটি সাধারণ পানিয়। রুহাফজা অনেক ফলের ঘন সিরাপ তাই এতে পানি ছাড়া আর কিছু মিশাতে হয়না। তবে এই রুহাফজাকে সাস্থ্যকর করতে এর সাথে ইসুবগুল বা তোকমা মেশানো হলে তা অনেক উপকারী হয়। যাদের এনার্জি কম, কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য এই উপায়ে খেলে ভালো।

আখের গুড়ের শরবত

এটিও সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি পানীয়। আখের গুড়ের সাথে পানি ও সামান্য লেবু ও চাইলে এক চিমটি লবন দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে এই শরবত। প্রায় স্যালাইন এর মত কাজ করবে এই শরবত। যাদের রোজাতে দূর্বল লাগে, মাংসপেশিতে টান লাগে, রক্তের সোডিয়াম বা সুগার কমে যায় তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।

তরল খাবারটি সাস্থ্যকর করার জন্য ঘরের তৈরি তরলের কোন বিকল্প নেই। কমার্শিয়াল ক্যান বা বোতল জাত তরল এড়িয়ে চললে ভালো। যেকোন তরল খাবারকে হেলদি করতে চিনি ও রঙ পরিহার করুন।

মধু, তোকমা, ইসুবগুল, লেবুর রস, পুদিনা পাতা,সামান্য লবন ইত্যাদি খাদ্য উপাদান যোগ করে আপনার বানানো তরলকে আরো হেলদি করুন।  পরিবারের সবাই যাতে এই রোজায় হাইড্রেট থাকে সেই চেষ্টাই করুন।

 

লেখকঃ

তামান্না চৌধুরী

প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান

ডায়েটিক্স এবং পুষ্টিবিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

কোলন ক্যান্সার: লক্ষণ ও চিকিৎসা

কোলন ক্যান্সার অন্ত্রের ক্যান্সারের একটি ধরন, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

লক্ষণ:

  • মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন: পরিবর্তনশীল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া।
  • রক্তক্ষরণ: মলের সাথে রক্ত আসা।
  • পেটে ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করা।
  • ওজন কমে যাওয়া: অকারণে ওজন হ্রাস।
  • শক্তি হ্রাস: সহজেই ক্লান্তি অনুভব করা।

চিকিৎসা:

  • সার্জারি: আক্রান্ত টিউমার অপসারণ করা।
  • কেমোথেরাপি: ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।
  • রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য রেডিয়েশন ব্যবহার করা।
  • ইমিউনোথেরাপি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।

প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়, তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকঃ
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
সিনিয়র কনসালটেন্ট
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ও তাদের লক্ষণ

ক্যান্সার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, এবং প্রতিটি ধরনের ক্যান্সারের ভিন্ন লক্ষণ ও প্রভাব থাকতে পারে। নিম্নে কিছু সাধারণ ক্যান্সারের ধরন এবং তাদের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

  • ফুসফুসের ক্যান্সার: ক্রমাগত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া।
  • স্তন ক্যান্সার: স্তনে গুটি, আকার পরিবর্তন, ব্যথা, নিপল থেকে অস্বাভাবিক তরল নির্গমন।
  • কোলন ক্যান্সার: মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা।
  • লিভার ক্যান্সার: ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, ত্বকের হলুদভাব।
  • কিডনি ক্যান্সার: মূত্রে রক্ত, পিঠের নিচে ব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি।
  • ত্বকের ক্যান্সার: নতুন আঁচিল বা বিদ্যমান আঁচিলের পরিবর্তন, ত্বকে ক্ষত যা সারে না।
  • মুখগহ্বরের ক্যান্সার: মুখে বা জিহ্বায় ঘা, চোয়ালের ব্যথা, গলায় অস্বস্তি।

ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ:
ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে এর অবস্থান ও ধরণ অনুযায়ী। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:

  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত
  • শরীরের যেকোনো অংশে গুটি বা ফোলা
  • অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলায় খুশখুশে ভাব

যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

লেখকঃ
ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

Women and Heart Disease: The Power of Early Detection and Prevention

Women Heart Disease Centre at evercare hospital dhaka

Heart disease has long been associated with men, but the truth is that it affects women just as profoundly. In fact, heart disease is the leading cause of death for both men and women worldwide.

However, women often experience different symptoms and risk factors compared to men. This blog post aims to shed light on the unique aspects of heart disease in women, emphasizing the importance of early detection and prevention.

Understanding the Gender Difference

Heart disease manifests differently in women than in men, making it crucial to recognize the unique symptoms.

While men often present with the classic symptoms like chest pain or discomfort, women are more likely to experience subtler signs such as shortness of breath, nausea, vomiting, jaw pain, and back pain. These differences can lead to under diagnosis and delayed treatment for women.

Risk Factors for Women

Several risk factors increase a woman’s likelihood of developing heart disease. These include:

Hormones: Estrogen offers some protective effects on the cardiovascular system, but this advantage diminishes after menopause, increasing the risk for women.

Age: The risk of heart disease increases with age, and women over 55 are more susceptible.

Family History: A family history of heart disease can significantly elevate a woman’s risk.

Smoking: Smoking is a strong risk factor for heart disease, and women who smoke are at a higher risk.

High Blood Pressure and Cholesterol: Elevated blood pressure and cholesterol levels contribute to heart disease risk.

Diabetes: Women with diabetes have a higher risk of heart disease compared to men with diabetes.

Physical Inactivity: Lack of regular exercise can contribute to heart disease risk factors.

Early Detection: The Key to Prevention

Know the Symptoms: Being aware of both classic and atypical symptoms of heart disease is crucial. Women should not dismiss any unusual symptoms and seek medical attention if they experience discomfort or distress.

Regular Health Check-ups: Routine check-ups allow healthcare professionals to monitor blood pressure, cholesterol levels, and other risk factors. Early detection can lead to timely interventions.

Understanding Family History: Knowing the family’s medical history helps women understand their risk profile and take proactive measures.

Blood Pressure and Cholesterol Management: Managing blood pressure and cholesterol through lifestyle changes, medication, or a combination of both can significantly reduce heart disease risk.

Healthy Lifestyle Choices: A balanced diet, regular exercise, maintaining a healthy weight, managing stress, and avoiding smoking are all integral to heart health.

Prevention Strategies

Heart-Healthy Diet: Emphasize whole grains, lean proteins, fruits, vegetables, and healthy fats. Limit saturated and trans fats, sodium, and added sugars.

Physical Activity: Aim for at least 150 minutes of moderate-intensity aerobic activity or 75 minutes of vigorous-intensity aerobic activity each week.

Stress Management: Engage in relaxation techniques like meditation, yoga, or deep breathing to manage stress effectively.

Avoid Smoking: Quitting smoking is one of the most significant steps to reduce heart disease risk.

Medication and Treatment: Follow prescribed medication regimens and treatment plans diligently if you have underlying conditions like high blood pressure or diabetes.

Women and heart disease are not mutually exclusive. Understanding the gender-specific symptoms and risk factors is essential for early detection and prevention.

By being proactive about heart health through regular check-ups, healthy lifestyle choices, and risk factor management, women can significantly lower their risk of heart disease and live healthier, more fulfilling lives.

It’s time to prioritize heart health and empower women to take charge of their well-being.

 

Author:

Dr. AQM Reza

Senior Consultant & Coordinator

Clinical & Interventional Cardiology

Evercare Hospital Dhaka

Protecting Children’s Health in Extreme Weather: Strategies for Pediatricians

Protecting Children's Health in Extreme Weather

Pediatricians’ Role in Protecting Children’s Health in Extreme Weather

Bangladesh, a country prone to extreme weather events such as floods, cyclones, and heatwaves and faces significant challenges when it comes to protecting the health and well-being of its vulnerable population, particularly children. As frontline healthcare providers, pediatricians play a crucial role in developing strategies to mitigate the adverse effects of extreme weather on children’s health.

This opinion piece explores some key strategies that pediatricians in Bangladesh can adopt to safeguard the health of children in the face of these climatic challenges.

Pediatricians can act as advocates for public awareness campaigns on the impacts of extreme weather on children’s health. By collaborating with local authorities, community leaders, and media outlets, they can disseminate crucial information about the specific risks children face during floods, cyclones, and heatwaves.

They can educate parents, caregivers, and school staff about the necessary precautions, early warning signs, and emergency preparedness measures which is essential to ensure the safety and well-being of children.

Enhancing Pediatric Healthcare in Vulnerable Regions

Pediatricians should work closely with policymakers and healthcare administrators to strengthen the healthcare infrastructure in vulnerable regions. This includes ensuring the availability of well-equipped pediatric wards in hospitals, establishing telemedicine facilities to provide remote consultations during emergencies, and enhancing the capacity of healthcare workers to address weather-related health issues. Collaborating with international organizations and NGOs, can help and secure necessary resources and expertise.

Heatwaves and Children’s Health

Heatwaves pose a significant threat to children’s health, leading to dehydration, heat exhaustion, and heatstroke. Pediatricians can contribute to the development of heatwave action plans at national and local levels. These plans should include guidelines for early identification of heat-related illnesses, strategies for reducing exposure to extreme heat, provision of adequate hydration, and instructions on recognizing and responding to heat emergencies.

They can be get involved in school and community-based interventions, such as adjusting school hours and providing cool shelters.

Moreover, pediatricians can also advocate the construction and retrofitting of climate-resilient infrastructure, such as flood-resistant hospitals, schools, and community centers. By collaborating with urban planners and architects, pediatricians can ensure that these structures are designed to withstand extreme weather events and equipped with the necessary facilities to address children’s health needs during emergencies.

Additionally, they can support and help initiatives to improve water and sanitation systems to prevent waterborne diseases, particularly after flooding.

Pediatricians as Leaders in the Fight Against Climate Change

Additionally, pediatricians should actively engage in research efforts to better understand the long-term impacts of extreme weather on children’s health. This includes monitoring and documenting the prevalence of weather-related illnesses, studying the effectiveness of interventions, and identifying emerging health risks associated with climate change. By generating evidence-based data, pediatricians can contribute to the development of targeted interventions and policies that prioritize children’s health.

Afterall, protecting the health of children in Bangladesh’s extreme weather conditions requires proactive measures and collaboration among pediatricians, policymakers, communities, and international partners.

By raising public awareness, strengthening healthcare infrastructure, developing action plans, promoting climate-resilient infrastructure, and conducting research, pediatricians can play a pivotal role in minimizing the adverse impacts of extreme weather events on children. Their dedication and expertise are vital in building a more resilient healthcare system that safeguards the well-being of Bangladesh’s youngest and most vulnerable population.

 

Author:

Dr. Sabina Sultana

Senior Consultant – Paediatrics & Neonatology

Coordinator- Paediatrics

Evercare Hospital Dhaka