পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ: সচেতনতা ও করণীয়

পাকস্থলীর ক্যানসার (স্টমাক ক্যানসার) হল পাকস্থলীতে হওয়া একটি মারাত্মক রোগ, যা সময়মতো শনাক্ত না হলে প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণ

পাকস্থলীর ক্যানসারের মূল কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ এটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে—

  • হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস (ধূমায়িত, অতিরিক্ত লবণাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার)
  • ধূমপান মদ্যপান
  • পারিবারিক ইতিহাস (বংশগত কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি)
  • স্থূলতা অনিয়মিত জীবনযাপন

ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা পরিবর্তন ও সচেতনতা জরুরি—

  1. সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ:
    • প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
    • অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
    • গ্রিল বা ভাজা খাবারের পরিবর্তে সিদ্ধ বা সেদ্ধ খাবার খান।
  2. হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ রোধ:
    • এই ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন পেটে থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
  3. ধূমপান মদ্যপান পরিহার করুন:
    • ধূমপান ও অ্যালকোহল পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো পরিহার করা উচিত।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ শারীরিক কার্যক্রম:
    • অতিরিক্ত ওজন পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুস্থ জীবনধারা ও সচেতনতা পেটের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান-মদ্যপান পরিহার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে এই মরণব্যাধি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাই সুস্থ থাকতে সচেতন হোন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।

 

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

হেড-নেক ক্যানসার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

হেড-নেক ক্যানসার হল মাথা ও গলার বিভিন্ন অংশে হওয়া এক ধরনের মারাত্মক ক্যানসার। সাধারণত মুখগহ্বর, গলা, কণ্ঠনালী, নাক ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে এই ক্যানসার দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এটি।

ক্যানসারের কারণ:

হেড-নেক ক্যানসারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • তামাকজাত দ্রব্য (ধূমপান ও পান-জর্দা খাওয়া)
  • অতিরিক্ত মদ্যপান
  • হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণ
  • অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা (বিশেষ করে ঠোঁটের ক্যানসারের ক্ষেত্রে)
  • দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

লক্ষণসমূহ:

হেড-নেক ক্যানসারের লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা কঠিন। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—

  • দীর্ঘদিন ধরে গলার ব্যথা
  • গিলতে কষ্ট হওয়া
  • মুখে বা গলায় কোনো ক্ষত বা ফোলাভাব
  • কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন বা স্বরভঙ্গ
  • একপাশের কান বা মাথায় ব্যথা
  • অকারণে ওজন কমে যাওয়া

চিকিৎসা প্রতিকার:

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে হেড-নেক ক্যানসারের চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে সহজ। চিকিৎসার মধ্যে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অস্ত্রোপচার প্রধান। তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধই এই ক্যানসার থেকে বাঁচার মূল উপায়। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।

হেড-নেক ক্যানসার জীবনঘাতী হলেও সচেতনতা ও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

মূত্রনালী সংক্রমণ (UTI): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মূত্রনালী সংক্রমণ (Urinary Tract Infection বা UTI) হলো এক ধরনের সংক্রমণ যা প্রধানত ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। এটি মূত্রথলি, মূত্রনালী বা কিডনিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

মূত্রনালী সংক্রমণ এর কারণ

UTI সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়, বিশেষত Escherichia coli (E. coli) ব্যাকটেরিয়ার কারণে। সংক্রমণের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • অপর্যাপ্ত পানি পান করা
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব চেপে রাখা
  • ডায়াবেটিস বা অন্য কোন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • গর্ভাবস্থা ও মেনোপজের ফলে হরমোনের পরিবর্তন
  • অস্বাস্থ্যকর যৌন মিলন

মূত্রনালী সংক্রমণ এর লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া
  • প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন বা মেঘাচ্ছন্ন হওয়া
  • তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • জ্বর ও কাঁপুনি (সংক্রমণ গুরুতর হলে)

মূত্রনালী সংক্রমণ এর প্রতিরোধ চিকিৎসা

প্রতিরোধের উপায়:

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • প্রস্রাব চেপে না রাখা
  • শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে পরিষ্কার থাকা

 

চিকিৎসা:

UTI-এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

লেখক:

অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএম শামীম ওয়াহিদ

সিনিয়র কনসালটেন্ট

ইউরোলজি বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ফুসফুসের ক্যান্সার: কারণ ও প্রতিকার

ফুসফুসের ক্যান্সার হল এক ধরনের মরণব্যাধি রোগ, যা প্রধানত ধূমপান ও বায়ু দূষণের কারণে হয়ে থাকে। এটি ফুসফুসের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং টিউমার গঠনের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কারণ:

  • ধূমপান: এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানে আক্রান্তদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • পরোক্ষ ধূমপান: ধূমপায়ীদের পাশে থাকলে পরোক্ষভাবে ধোঁয়ার সংস্পর্শেও ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বায়ু দূষণ: দূষিত বায়ু ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসাও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • রেডিয়েশন: অতিরিক্ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসাও ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রতিকার:

  • ধূমপান পরিহার: এটি ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
  • পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ: দূষিত স্থান এড়িয়ে চলা উচিত।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার গ্রহণ করা দরকার।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসার কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
  • ব্যায়াম: শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি।

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি: ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হলো ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ, যা দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের ফলে হয়। এটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (CKD) অন্যতম প্রধান কারণ এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির কারণ

ডায়াবেটিস হলে উচ্চ রক্তে শর্করা কিডনির গ্লোমেরুলাস (ফিল্টারিং ইউনিট) ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে কিডনি ধীরে ধীরে প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে শুরু করে, যা কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

প্রধান লক্ষণ

  • প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি (প্রোটিনিউরিয়া)
  • হাত-পা ও চোখের চারপাশে পানি জমা (এডিমা)
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা

প্রতিরোধ চিকিৎসা

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা – রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
  • সুষম খাদ্যাভ্যাস – লবণ ও প্রোটিন কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
  • ধূমপান অ্যালকোহল পরিহার – এগুলো কিডনির ক্ষতি বাড়ায়।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ – কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। এখন অনেক উন্নত ঔষধ আছে যা গ্রহণে প্রোটিন যাবার পরিমাণ কমানো সম্ভব।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি নীরবে কিডনির ক্ষতি করে, তাই ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করানো এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।

 

লেখকঃ

ডা. তাবাসসুম সামাদ

কনসালটেন্ট

নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

স্তন ক্যান্সার: নারীদের জন্য সতর্কতা

স্তন ক্যান্সার হল নারীদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে নিরাময়যোগ্য হতে পারে।

কারণ:

  • জিনগত প্রভাব: পরিবারের কারও স্তন ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • হরমোনের পরিবর্তন: কিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতা স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাব ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল ধূমপান: এগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়ক।
  • রেডিয়েশন: অতিরিক্ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা ক্ষতিকর হতে পারে।

সতর্কতা প্রতিকার:

  • নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা: মাসে একবার নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা উচিত।
  • নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ: বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি করানো উচিত। তবে ৪০ বছর বয়সের নিচে ম্যামোগ্রাফি করানো উচিৎ নয়।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা দরকার।
  • ধূমপান অ্যালকোহল এড়ানো: এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার সাফল্যের হার অনেক বেশি। তাই, নারীদের উচিত সচেতন থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার, যা প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সৃষ্ট কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মিউটেশন থেকে তৈরি হয়। এটি বিশেষ করে ৫০ বছর বা তার উপরের পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে কম বয়সের পুরুষদেরও প্রভাবিত করতে পারে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন, তবে কিছু ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ:

১. বয়স: প্রোস্টেট ক্যান্সার সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে বেশি হয়। ৫০ বছর বা তার উপরের পুরুষদের মধ্যে এ রোগের সম্ভাবনা বেশি।

২. জেনেটিক্স: যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার থাকে, তবে সেই পুরুষদেরও এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে, পুরুষদের পিতার বা ভাইয়ের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার থাকলে তাদেরও এটি হতে পারে।

৩. ডায়েট লাইফস্টাইল: উচ্চ চর্বি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং কম শারীরিক কার্যক্রম ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপান ও তামাক সেবনও ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

৪. হারমোনাল পরিবর্তন: টেস্টোস্টেরনের মতো পুরুষ হরমোন প্রোস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

 

প্রতিরোধের উপায়: প্রোস্টেট ক্যান্সারকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাকসবজি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষত, সয়া, ব্রোকলি, টমেটো এবং বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

২. নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৩. স্বাস্থ্য পরীক্ষা স্ক্রিনিং: প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপ চিহ্নিত করতে নিয়মিত PSA (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) পরীক্ষা এবং ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষত ৫০ বছর বয়সের পর।

অতএব, প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণের মাধ্যমে পুরুষরা প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পেতে পারেন।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

জেনে নিন ঘুমজনিত সমস্যাগুলো

স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অন্যতম শর্তের মধ্যে পড়ে স্বাস্থ্যকর ঘুম। মানে গভীর ঘুম। বলা হয়, প্রতিরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে আসবে জীবনীশক্তি। ঘুম না হলে স্ট্রেস ভর করবে, শারীরিক গঠন নষ্ট হবে এবং অস্বস্তিবোধ হবে। নিদ্রা সংক্রান্ত ব্যাধিগুলি এমন, যা ঘুমের গুণমান, সময় এবং স্থিতি প্রভাবিত করে, ফলে দিনের মধ্যে ক্লান্তি ও স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে প্রধান ঘুমজনিত ব্যাধি দেওয়া হলো:

অনিদ্রা (Insomnia)

ঘুম আসতে দেরি হওয়া, বারবার জেগে ওঠা বা খুব তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা। এটি স্বল্পমেয়াদী (Acute) বা দীর্ঘমেয়াদী (Chronic) হতে পারে। সাধারণত দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ বা জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণে হয়।

স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

ঘুমের সময় বারবার শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA): গলায় পেশি শিথিল হয়ে শ্বাসরোধ হওয়া। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (CSA): মস্তিষ্ক শ্বাস-প্রশ্বাসের সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়।

লক্ষণ: উচ্চস্বরে নাক ডাকা, হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, অতিরিক্ত দিনের ঘুমঘুম ভাব।

নারকোলেপসি (Narcolepsy)

অতিরিক্ত দিনের ঘুমঘুম ভাব ও হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়া।

ক্যাটাপ্লেক্সি (Cataplexy): হঠাৎ পেশী দুর্বল হয়ে পড়া। এটি ঘুম ও জাগরণের চক্র নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের অক্ষমতার কারণে ঘটে।

রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম (Restless Legs Syndrome – RLS)

বিশেষ করে রাতে, পায়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং তা নাড়িয়ে নেওয়ার প্রবণতা। ফলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।

সার্কাডিয়ান রিদম স্লিপ ডিসঅর্ডার (Circadian Rhythm Sleep Disorders)

শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা।

প্রকারভেদ:

ডিলেইড স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডার (DSPD): খুব দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে জাগা।

অ্যাডভান্সড স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডার (ASPD): খুব তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি জাগা।

শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার: নাইট শিফট বা পরিবর্তিত শিফটের কারণে ঘুমের সমস্যা।

জেট ল্যাগ ডিসঅর্ডার: সময় অঞ্চলের পরিবর্তনের কারণে ঘুমের সমস্যা।

প্যারাসমনিয়া (Parasomnias)

ঘুমের সময় অস্বাভাবিক আচরণ।

উদাহরণ:

স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking): ঘুমের মধ্যে হাঁটা বা কাজ করা।

স্লিপ টকিং (Sleep Talking): ঘুমের মধ্যে কথা বলা।

নাইট টেরর (Night Terrors): ঘুমের মধ্যে আকস্মিক আতঙ্ক ও চিৎকার।

আরইএম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার (RBD): স্বপ্ন অনুযায়ী বাস্তবে শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখানো।

হাইপারসমনিয়া (Hypersomnia)

পর্যাপ্ত ঘুমের পরও অতিরিক্ত ঘুমঘুম ভাব। এটি বিভিন্ন চিকিৎসা সমস্যার কারণে হতে পারে।

ব্রুক্সিজম (Bruxism – Teeth Grinding)

ঘুমের সময় অজান্তে দাঁত ঘষা। এটি চোয়ালের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।

স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis)

ঘুম থেকে জাগার সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার সময় শরীর নাড়াতে না পারা। অনেক সময় এটি ভৌতিক অনুভূতি বা কল্পনার সাথে যুক্ত থাকে।

নকটর্নাল এনুরেসিস (Nocturnal Enuresis – Bedwetting)

ঘুমের সময় অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসার উপায়:

জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা, মানসিক চাপ কমানো।

চিকিৎসা: স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য CPAP মেশিন, নারকোলেপসি বা RLS-এর জন্য ওষুধ।

সাইকোলজিক্যাল থেরাপি: বিশেষ করে অনিদ্রার জন্য সগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) কার্যকর।

 

লেখক:

ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেসপিরেটরি মেডিসিন

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

ক্যান্সার রোগীরা রোজা রাখলে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন

রমজান মুসলমানদের জন্য সংযমের মাস, যা আত্মিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্যান্সার রোগীদের জন্য দীর্ঘ সময় উপবাস থাকা একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষত যারা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই, তবে অনেক রোগী আত্মিক প্রশান্তির জন্য রোজা রাখতে চান। সঠিক পরিকল্পনা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলে ক্যান্সার রোগীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে রোজা পালন করতে পারেন।

১. চিকিৎসকের পরামর্শ: যারা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপি গ্রহণ করছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি রোজা রাখার ফলে ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি থেকে থাকে, তবে রোজা না রাখাই ভালো।

২. ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি সামঞ্জস্য করা: দিনের বেলায় খাদ্য গ্রহণের সুযোগ না থাকায় ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। ব্যথানাশক, বমি প্রতিরোধী ও হরমোনাল ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেগুলো গ্রহণ করতে হবে।

৩. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি প্রতিরোধ: রোজা রাখলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। হালকা ব্যায়াম যেমন- হাঁটাহাঁটি, শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।

৪. পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

 

সেহরির পরামর্শ

পর্যাপ্ত পানি পান করুন (কমপক্ষে ২-৩ গ্লাস) যাতে সারাদিন ডিহাইড্রেশন এড়ানো যায়।

ধীরে হজম হয় এমন খাবার, যেমন লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ডিম, দুধ, বাদাম ও ফল খাওয়া উচিত।

অতিরিক্ত ঝাল, লবণ ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে।

 

ইফতারের পরামর্শ

খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করুন।

হালকা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, যেমন মাছ বা মুরগির মাংস, ডাল, শাকসবজি, দই, বাদাম ও ফল।

অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার (পিয়াজু, বেগুনি, জিলাপি), বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।

সেহরি ও ইফতারের মধ্যে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

সুপ, দই ও ফলের রস গ্রহণ করলে শরীর আর্দ্র থাকবে।

 

বিশেষ বিশেষ ক্যান্সার রোগীদের জন্য সতর্কতা

কেমোথেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা রোজা রাখার ফলে ডিহাইড্রেশন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা উচিত নয়।

রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা

বিশেষত পেট বা তলপেটে রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগীদের জন্য হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা রোজা রাখার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের পরবর্তী রোগীরা

অস্ত্রোপচারের পর পর্যাপ্ত পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই সময় রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে।

 

নিম্নলিখিত কোনো লক্ষণ দেখা দিলে রোগীদের অবিলম্বে রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়-

অতিরিক্ত দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা

ক্রমাগত বমি বা ডায়রিয়া

তীব্র ডিহাইড্রেশন (মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া)

জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ

 

উপসংহার

রমজান মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তির মাস, যা ক্যান্সার রোগীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে যদি রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে ইসলাম ধর্মে অন্যান্য ইবাদত—যেমন দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে রমজান পালন করার সুযোগ রয়েছে।

রোজার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ ইসলাম শরীরের সুস্থতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। যদি রোজা রাখার ফলে চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বা শরীরের ক্ষতি হয়, তবে তা পরিহার করাই উত্তম।

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসার আরেক উপায়

রেডিওথেরাপি, ক্যান্সার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা উচ্চ শক্তির রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস বা ছোট করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। এটি সাধারণত ক্যান্সারের আক্রান্ত এলাকায় সরাসরি রেডিয়েশন প্রেরণ করে, যাতে কোষের ডিএনএ-তে ক্ষতি হয় এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাধারণত এককভাবে অথবা কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের সঙ্গে একত্রে ব্যবহৃত হয়।

রেডিওথেরাপি কাজ করে ক্যান্সার কোষের ডিএনএ ধ্বংস করে, ফলে কোষটি বিভাজিত হতে পারে না এবং বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এই রেডিয়েশন সাধারণত এক বা একাধিক সেশনে প্রয়োগ করা হয়, এবং এটি অত্যন্ত লক্ষ্যভিত্তিকভাবে ক্যান্সার কোষে প্রেরিত হয় যাতে আশপাশের সুস্থ কোষ কম আক্রান্ত হয়। তবে, কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পরতে পারে, তবে বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাময়িক এবং চিকিৎসার শেষে সেরে যায়।

রেডিওথেরাপি দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে:

  1. এক্সটার্নাল রেডিওথেরাপি (External Beam Radiotherapy): এই ধরনের রেডিওথেরাপি বাহ্যিক যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে রেডিয়েশন প্রেরণ করা হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি, যেখানে রেডিয়েশন সরাসরি ক্যান্সারের জায়গায় লক্ষ্য করা হয়।
  2. ইন্টার্নাল রেডিওথেরাপি (Brachytherapy): এই পদ্ধতিতে রেডিয়েশন সরাসরি ক্যান্সারের টিউমারের ভিতরে বা কাছাকাছি স্থানে ইমপ্ল্যান্ট করা হয়। এটি সাধারণত প্রোস্টেট ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের চিকিত্সার একটি কার্যকরী উপায়, বিশেষত যখন কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ কার্যকরী না হয়। এটি টিউমার সাইজ ছোট করতে এবং মেটাস্ট্যাসিস (ক্যান্সারের বিস্তার) রোধ করতে সাহায্য করে। তবে, এটি সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য উপযুক্ত নয় এবং রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়।

এছাড়া, রেডিওথেরাপি সাধারণত রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং ক্যান্সারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়, এবং এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা