বেডসোর: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

বেডসোর, যাকে প্রেশার আলসার বা ডেকুবিটাস আলসারও বলা হয়, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা দীর্ঘ সময় ধরে শয্যাশায়ী বা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ত্বক ও নিচের টিস্যুগুলির উপর চাপের কারণে হয়, যা রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত করে এবং টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে। বেডসোরের সঠিক পরিচর্যা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেডসোরের কারণ

বেডসোর মূলত নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য হয়:

১ . দীর্ঘ সময় ধরে চাপ: একই অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে বা বসে থাকলে ত্বক ও টিস্যুতে চাপ পড়ে।

২ . ঘর্ষণ: বিছানা বা হুইলচেয়ারের সাথে ত্বকের ঘর্ষণের ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

৩. আর্দ্রতা: ঘাম বা মূত্রের সংস্পর্শে ত্বক নরম হয়ে ক্ষতের ঝুঁকি বাড়ে।

৪ .রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া: ডায়াবেটিস বা রক্তনালীর রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে বেডসোরের ঝুঁকি বাড়ে।

৫ . পুষ্টির অভাব: প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে ত্বক দুর্বল হয়ে পড়ে।

বেডসোরের লক্ষণ

বেডসোরের লক্ষণগুলি ধাপে ধাপে দেখা দেয়:

১ . প্রথম পর্যায়: ত্বক লাল হয়ে যায় এবং স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হয়।

২ . দ্বিতীয় পর্যায়: ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফোসকা বা খোলা ঘা দেখা দেয়।

৩ . তৃতীয় পর্যায়: ক্ষত ত্বকের নিচের টিস্যু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

৪. চতুর্থ পর্যায়: ক্ষত পেশি, হাড় বা জোড় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

বেডসোরের চিকিৎসা

বেডসোরের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্ষতের গভীরতা ও অবস্থানের উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  • ক্ষত পরিষ্কার করা: ক্ষতস্থান জীবাণুমুক্ত করে ড্রেসিং প্রয়োগ করা।
  • চাপ কমানো: বিশেষ ম্যাট্রেস বা কুশন ব্যবহার করে চাপ কমানো।
  • ওষুধ:সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা ক্ষত নিরাময়ের জন্য বিশেষ ক্রিম ব্যবহার করা।
  • সার্জারি:গভীর ক্ষতের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্লাষ্টিক সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে প্রয়োজন হতে পারে।

বেডসোরের প্রতিকার প্রতিরোধ

বেডসোর প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন:শয্যাশায়ী রোগীদের প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর পজিশন পরিবর্তন করুন।
  • স্পেশাল ম্যাট্রেস ব্যবহার:এয়ার বা ফোম ম্যাট্রেস ব্যবহার করে চাপ কমানো।
  • ত্বক পরিষ্কার শুষ্ক রাখা:নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • পুষ্টিকর খাবার:প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার খান।

নিয়মিত চেকআপ: ত্বকের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

  • ত্বক লাল হয়ে ফুলে গেলে
  • ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা গন্ধ বের হলে
  • জ্বর বা ব্যথা হলে
  • ক্ষত নিরাময় না হলে বা খারাপ হলে

বেডসোর একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সঠিক যত্ন ও সচেতনতা এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। শয্যাশায়ী রোগীদের বিশেষ যত্ন নিন এবং তাদের ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখুন।