মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার: পান, তামাক, জর্দা ইত্যাদির মারাত্মক প্রভাব

মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ যা মুখের ভিতরের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হয়। এই ক্যান্সার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কেন পান, তামাক, জর্দা মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়?

পান, তামাক, জর্দা ইত্যাদি মুখে রাখা বা চিবানোর ফলে মুখের ভিতরের কোষগুলি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসে। এই বিষাক্ত পদার্থগুলি কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে।

  • পান, তামাক, জর্দায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ: এই পদার্থগুলিতে নাইট্রোসামাইন, পলিসাইক্লিক এরোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন এবং অন্যান্য ক্যান্সারজনক পদার্থ থাকে। এই পদার্থগুলি মুখের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ডিএনএতে পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়।
  • মুখের ভিতরে আঘাত: পান, তামাক, জর্দা চিবানোর সময় মুখের ভিতরের কোষগুলিতে আঘাত লাগতে পারে। এই আঘাতগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।
  • প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: পান, তামাক, জর্দা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে শরীর ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে লড়াই করতে পারে না।

মুখ মুখগহ্বরের ক্যান্সারের অন্যান্য কারণ

পান, তামাক, জর্দা ছাড়াও আরও কিছু কারণ মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন:

  • অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • মুখের গহ্বরের সংক্রমণ: কিছু ধরনের ভাইরাস, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • পরিবারিক ইতিহাস: যাদের পরিবারে মুখের ক্যান্সারের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

মুখ মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণ

মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে রোগটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • মুখে গল বা পিণ্ড অনুভূত হওয়া
  • মুখে ঘা বা ক্ষত হওয়া যা দীর্ঘদিন ধরে ভালো না হওয়া
  • গিলতে সমস্যা
  • কণ্ঠস্বর পরিবর্তন
  • খাবার চিবানোর সময় সমস্যা
  • কানে ব্যথা
  • ওজন কমে যাওয়া

মুখ মুখগহ্বরের ক্যান্সারের চিকিৎসা

মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগীর স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। সাধারণত এই রোগের চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  • সার্জারি: ক্যান্সারযুক্ত অংশ অপসারণ করা
  • রেডিওথেরাপি: রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা
  • কেমোথেরাপি: ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা

প্রতিরোধ

মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হল পান, তামাক, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করা। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি।

উপসংহার:

মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ। পান, তামাক, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার এই রোগের প্রধান কারণ। তাই সুস্থ থাকতে এবং এই রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পান, তামাক, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত জরূরি।

মনে রাখবেন:

  • এই তথ্যটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।
  • কোনো ধরনের রোগের জন্য সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।