কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা খুবই জরুরি। কারণ, কিডনি রোগের কারণে শরীরে অনেক পরিবর্তন হয় এবং খাবারের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলোকে সামাল দিতে হয়।
কেন কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন?
- বর্জ্য পদার্থ: স্বাস্থ্যবান কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই কাজটি সঠিকভাবে হয় না। তাই খাবারের মাধ্যমে এমন কিছু বর্জ্য পদার্থ শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয় যা কিডনি সহজে বের করে দিতে পারবে না।
- জল ও লবণের ভারসাম্য: কিডনি শরীরে জল ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই খাবারের মাধ্যমে জল ও লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
- অন্যান্য খনিজ পদার্থ: কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অন্যান্য খনিজ পদার্থের পরিমাণও পরিবর্তিত হতে পারে। তাই খাবারের মাধ্যমে এই খনিজ পদার্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
কিডনি রোগীদের জন্য খাদ্য পরামর্শ
- প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
- পটাসিয়াম: কলা, কমলালেবু, আঙ্গুর ইত্যাদিতে পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পটাশিয়াম রক্তে জমে যেতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- ফসফরাস: মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদিতে ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফসফরাস হাড়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- সোডিয়াম: লবণে সোডিয়াম থাকে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং কিডনির কাজকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই লবণযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত।
- পানি: কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করা উচিত।
- অন্যান্য খাবার: কিডনি রোগীদের ফল, সবজি, পুরো শস্য ইত্যাদি খাওয়া উচিত। তবে কোন ফল বা সবজি খাওয়া যাবে এবং কোনটি খাওয়া যাবে না তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য খাদ্য তালিকা
কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত। এই তালিকায় কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার খাওয়া যাবে না তা উল্লেখ করা থাকে। ডায়েটিশিয়ান একজন কিডনি রোগীর জন্য একটি ব্যক্তিগত খাদ্য তালিকা তৈরি করে দিতে পারেন।
কিডনি রোগীদের জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ
- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন: কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার খাওয়া যাবে না তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।
- নিয়মিত ওজন পরিমাপ করুন: ওজন বাড়লে বা কমলে ডাক্তারকে জানান।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: উচ্চ রক্তচাপ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
- ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার করুন: ধূমপান এবং মদ্যপান কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মনে রাখবেন: কিডনি রোগীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার এবং ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেলে কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখা যায়।