ট্রমা: শরীর ও মনের আঘাত
আমাদের জীবনে অনেক সময়ই আমরা বিভিন্ন ধরনের আঘাতের সম্মুখীন হই। এই আঘাত শুধু শারীরিকই হতে পারে আবার মানসিকও হতে পারে। এই আঘাতকেই আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ট্রমা বলি।
ট্রমা কী?
ট্রমা হলো শরীর বা মনে কোনো ধরনের আঘাতের ফলে সৃষ্ট এক ধরনের অবস্থা। এই আঘাতটি হতে পারে শারীরিক, যৌন বা মানসিক। ট্রমা শুধুমাত্র একবারের ঘটনার ফলেই হয়, এমনটা না। দীর্ঘদিন ধরে চলা কোনো নির্যাতন বা মানসিক চাপও ট্রমা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রমার ধরন
ট্রমা মূলত দুই ধরনের হয়:
- শারীরিক ট্রমা: সড়ক দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া, কাটা, পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি শারীরিক আঘাতের ফলে সৃষ্ট ট্রামাকে শারীরিক ট্রমা বলে।
- মানসিক ট্রমা: যৌন নির্যাতন, ঘনিষ্ঠজনের মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ ইত্যাদি মানসিকভাবে ক্ষতিকর ঘটনার ফলে সৃষ্ট ট্রামাকে মানসিক ট্রমা বলে।
ট্রমার কারণ
ট্রমার কারণ অনেকগুলো হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হল:
- শারীরিক নির্যাতন: ধাক্কা দেওয়া, মারধর করা, পুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
- যৌন নির্যাতন: কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।
- মানসিক নির্যাতন: গালিগালাজ করা, হুমকি দেওয়া, উপহাস করা ইত্যাদি।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি।
- যুদ্ধ: যুদ্ধের কারণে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হওয়া।
- প্রিয়জনের মৃত্যু: কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু মানসিকভাবে খুব কষ্টদায়ক হতে পারে।
ট্রমার লক্ষণ
ট্রমার লক্ষণ ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। সাধারণত ট্রমায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:
- মানসিক লক্ষণ: ভয়, উদ্বেগ, হতাশা, রাগ, ঘুমের সমস্যা, স্বপ্নদোষ, একাকিত্ববোধ ইত্যাদি।
- শারীরিক লক্ষণ: মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদ্স্পন্দন, ঘামা ইত্যাদি।
- আচরণগত লক্ষণ: অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপান, আক্রমণাত্মক আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
ট্রমার প্রাথমিক চিকিৎসা
ট্রমা একজন ব্যক্তির জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ট্রমার চিকিৎসা করা খুবই জরুরি। ট্রমার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে কিছু সাধারণ জিনিস করা যেতে পারে:
- সমর্থন: ট্রমায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়া।
- সুরক্ষা: নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া।
- চিকিৎসা: মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া।
ট্রমা থেকে মুক্তি
ট্রমা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), আই মুভমেন্ট ডেসেনসিটিজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং (EMDR) ইত্যাদি ট্রমার চিকিৎসায় কার্যকরী।
মনে রাখবেন, ট্রমা একাকী লড়াই করার বিষয় নয়। যদি আপনি বা আপনার কেউ ট্রমায় আক্রান্ত হন, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।