কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্তকে পরিশোধন করে, অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফলে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। যখন কিডনি তার কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন ডায়ালাইসিস একটি জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।
ডায়ালাইসিস কী?
ডায়ালাইসিস হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি মেশিনের সাহায্যে রক্তকে পরিশোধন করা হয়। যখন কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ সম্পাদন করতে অক্ষম হয়, তখন নির্দিষ্ট মেশিনের সাহায্যে কাজটি কৃত্রিমভাবে করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ডায়ালাইসিস বলা হয়।
ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন কেন?
যখন কিডনি রক্ত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বর্জ্য এবং তরল অপসারণ করতে অক্ষম হয়, বা যখন কিডনির কার্যকারিতা 10-15% কমে যায়, যেটিকে “কিডনি ব্যর্থতা বা রেনাল ব্যর্থতা” বলা হয়, তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। কিডনি ব্যর্থতা তীব্র (হঠাৎ) বা দীর্ঘস্থায়ী (দীর্ঘমেয়াদী) হতে পারে।
ডায়ালাইসিসের ধরন
ডায়ালাইসিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:
- হেমোডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে রোগীর রক্তকে একটি মেশিনের মাধ্যমে পাঠানো হয়, যেখানে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি ফিল্টার করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত সপ্তাহে কয়েকবার হাসপাতালে বা একটি বিশেষ কেন্দ্রে করা হয়।
- পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে রোগীর পেটের ভেতরে একটি তরল পদার্থ প্রবেশ করানো হয়, যা বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। পরে এই তরল পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি ঘরে বসেও করা যায়।
ডায়ালাইসিসের সুবিধা
- জীবনযাপনের মান উন্নতি: ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে রোগীর শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া হয়, যার ফলে রোগী ভালো অনুভব করে এবং তার জীবনযাপনের মান উন্নত হয়।
- জীবনকাল বৃদ্ধি: ডায়ালাইসিস কিডনি রোগীদের জীবনকাল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়: ডায়ালাইসিস হৃদরোগ, হাড়ের রোগ এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়ালাইসিসের অসুবিধা
- সময়সাপেক্ষ: ডায়ালাইসিস একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
- খরচবহুল: ডায়ালাইসিস একটি খরচবহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।
- জীবনযাপনে পরিবর্তন: ডায়ালাইসিসের কারণে রোগীর জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়।
ডায়ালাইসিসের পরামর্শ
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া: ডায়ালাইসিসের সময় খাবারে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।
- ওষুধ সেবন: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
- নিয়মিত চেকআপ: নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়ালাইসিস কিডনি রোগীদের জন্য একটি জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। যদি আপনার কিডনি রোগ হয়ে থাকে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।