প্রায় প্রতিটি মেয়ের জীবনেই মাসিকের সময় ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। এই ব্যথাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডিসমেনোরিয়া বলা হয়। সাধারণত মাসিক শুরুর এক দিন আগে বা শুরুর দিনে এই ব্যথা অনুভূত হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথাটি এত তীব্র হয় যে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
মাসিকের ব্যথা কেন হয়?
মাসিকের ব্যথার প্রধান কারণ হল জরায়ুর পেশির সংকোচন। মাসিকের সময় জরায়ুতে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় যা জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে। এই সংকোচনের ফলেই ব্যথা অনুভূত হয়।
ব্যথার ধরন:
- প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া: কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হওয়া ব্যথা। সাধারণত কিশোরী ও তরুণীদের হয়।
- সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া: অন্য কোনো রোগের কারণে হওয়া ব্যথা। যেমন, এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড ইউটেরাস ইত্যাদি।
মাসিকের ব্যথার লক্ষণ
- তলপেটে ব্যথা
- কোমর বা পিঠে ব্যথা
- উরুতে ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- পাতলা পায়খানা
- ক্লান্তি
- মেজাজ খারাপ
মাসিকের ব্যথার চিকিৎসা
মাসিকের ব্যথার চিকিৎসা ব্যথার তীব্রতা এবং কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা করা হয়:
- ব্যথানাশক ওষুধ: ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- গরম সেঁক: গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করে তলপেটে সেঁক দিলে ব্যথা কমে।
- আराम: যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন।
- হালকা ব্যায়াম: হাঁটা, যোগাসন ইত্যাদি ব্যায়াম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- হর্মোন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: সুষম খাবার খাওয়া, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া ইত্যাদি।
মাসিকের ব্যথা প্রতিরোধ
- সুষম খাবার: আঁশযুক্ত খাবার, ফল ও সবজি বেশি করে খান।
- পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- তनाव কমান: ধ্যান, যোগাসন ইত্যাদির মাধ্যমে তनाव কমান।
- গরম পানিতে স্নান: গরম পানিতে স্নান করলে ব্যথা কমতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
- যদি ব্যথা অসহ্য হয়।
- যদি ব্যথা দিনে দিনে বাড়তে থাকে।
- যদি ব্যথার সাথে অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দেয়।
- যদি ওষুধ খাওয়ার পরেও ব্যথা না কমে।
মনে রাখবেন: মাসিকের ব্যথা স্বাভাবিক হলেও তীব্র ব্যথায় আপনার দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।