লিভার সিরোসিস হল যকৃতের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যাতে যকৃতের কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং তাদের জায়গায় দাগের মতো টিস্যু তৈরি হয়। এই দাগের টিস্যু যকৃতের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
লিভার সিরোসিসের মূল কারণ হল দীর্ঘদিন ধরে যকৃতের ক্ষতি। এই ক্ষতির কারণ হতে পারে:
- অতিরিক্ত মদ্যপান: মদ্যপান যকৃতের সবচেয়ে সাধারণ ক্ষতিকারক কারণ।
- হেপাটাইটিস: হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস যকৃতে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং সিরোসিসের কারণ হতে পারে।
- ফ্যাটি লিভার: মেদবহুল খাবার খাওয়া এবং মেদবহুলতা ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে যা ধীরে ধীরে সিরোসিসে পরিণত হতে পারে।
- অন্যান্য কারণ: অটোইমিউন রোগ, যকৃতের জন্মগত রোগ, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে সিরোসিসের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। রোগটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
- ক্লান্তি: সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
- ভূখণ্ড: ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া।
- পেটে ফোলা: পেটে জল জমে ফোলা।
- ভুঁড়ি: পেটে শিরা ফুলে উঠা।
- পায়ে ফোলা: পায়ে জল জমে ফোলা।
- বমি বমি ভাব: খাবার হজম করতে অসুবিধা।
- রক্তক্ষরণ: নাক, মুখ বা অন্য কোথাও থেকে সহজে রক্তক্ষরণ।
- মানসিক পরিবর্তন: বিভ্রান্তি, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
লিভার সিরোসিসের জটিলতা
- যকৃতের ক্যান্সার: সিরোসিস যকৃতের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- এনসেফ্যালাপ্যাথি: যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে গেলে মস্তিষ্কে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায় যার ফলে বিভ্রান্তি, কোমা ইত্যাদি হতে পারে।
- কিডনি রোগ: যকৃতের রোগ কিডনির কার্যক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা করা হয়:
- কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা: যদি সিরোসিসের কারণ হেপাটাইটিস হয়, তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসা করা হয়।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: মদ্যপান বন্ধ করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ওজন কমানো ইত্যাদি।
- ওষুধ: বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে জটিলতাগুলো কমানো হয়।
- যকৃত প্রতিস্থাপন: যখন যকৃতের কার্যক্ষমতা খুব কমে যায়, তখন যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়।
লিভার সিরোসিস প্রতিরোধ
- মদ্যপান পরিহার: মদ্যপান সিরোসিসের সবচেয়ে বড় কারণ।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- হেপাটাইটিসের টিকা: হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের টিকা নিন।
- নিয়মিত চেকআপ: যদি আপনার যকৃতের কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে নিয়মিত চেকআপ করান।