লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার বা যকৃত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যার প্রধান কাজ হলো রক্ত পরিশোধন ও ক্ষতিকর টক্সিন বের করে শরীরকে সুস্থ রাখা। লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে ক্ষতিকর টক্সিন শরীরে জমে যায়। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রায় অস্বাভাবিকতা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে লিভারে নানা রোগ দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড, এইচডিএল-এর মাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিজনিত সমস্যার কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়, যেমন; চোখ হলুদ বর্ণের হয়ে যাওয়া, পেটে তরল জমে ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি-অবসাদ অনুভব করা, শরীরে ভিন্ন ভিন্ন স্থান চুলকানো, হঠাৎ হঠাৎ কথা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, ভাইরাস বা জীবাণু আক্রমণে লিভার সংক্রমিত হলে লিভারে প্রদাহ হয়, যা লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। লিভার ইনফেকশন বা যকৃত সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরন হলো, হেপাটাইটিস ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সংস্পর্শে আসলে বা দূষিত খাবার-পানি শরীরে গেলে ‘হেপাটাইটিস এ’ ছড়ায়। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস বি এবং সি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ত, বীর্যসহ অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে। তাই লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কোন উপসর্গ দেখা দিলে হেপাটাইটিস নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা লিভার সুস্থ রাখার জন্য মূলত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লিভারকে সুস্থ রাখতে রসুন ভীষণ উপকারী। রসুনে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল জাতীয় উপাদান রয়েছে। নিয়মিত রসুন খেলে লিভার থেকে এক ধরনের বিশেষ এনজাইম তৈরি হয়, যা শরীর থেকে টক্সিন নিষ্কাশনে সাহায্য করে।

এছাড়া কাঁচা হলুদ, বিভিন্ন ফলমূল (বিশেষ করে আপেল, পেঁপে, আঙ্গুর), সবুজ শাকসবজি, সয়াবিন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য, আমলার রস, গ্রিন-টি, কফি ইত্যাদি খেলে বা পান করলে লিভার সুস্থ থাকে। তবে কিছু খাবার বর্জন করাও প্রয়োজন। যেমন; শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যাদের মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে তাদের লিভার বিশেষ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে।

এছাড়া সফট ড্রিংকস, চকোলেট, আইসক্রিম, ভাঁজাপোড়া খাবার, কাঁচা লবণ, বাটার-ঘি, অতিরিক্ত চিনি, রেডমিট ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করা উচিৎ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সামগ্রিক ওজনের ১০% কমানো গেলে ফ্যাটি লিভারের পরিমাণ ৩-৫% কমানো সম্ভব।

 

ডাঃ মুশফিকুল আবরার
সহযোগী কনসালটেন্ট
হেপাটোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম