শিশুদের মূত্রনালীর সংক্রমণ: কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

শিশুদের মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এই সংক্রমণ ঘটে। যদিও মূত্রনালীর সংক্রমণ  অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সহজেই চিকিৎসা করা যায়, তবে জটিল ক্ষেত্রে সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে।

কারণ

  • ব্যাকটেরিয়া: মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার ফলে সংক্রমণ হয়। সাধারণত, অন্ত্র থেকে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে।
  • মূত্রনালীর গঠনগত সমস্যা: জন্মগত কোনো গঠনগত সমস্যা বা মূত্রনালীর সংকীর্ণতা থাকলে প্রস্রাব সঠিকভাবে বের হতে পারে না এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
  • মূত্রনালীর বাধা: মূত্রনালীতে পাথর বা টিউমার থাকলে প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ হতে পারে।

লক্ষণ

শিশুদের মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বোঝা কঠিন হতে পারে। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:

  • জ্বর: উচ্চ জ্বর হতে পারে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব: প্রস্রাব করার ইচ্ছা অনেক বার হতে পারে।
  • প্রস্রাব করার সময় ব্যথা: প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারে।
  • মূত্রে রক্ত: কখনও কখনও মূত্রে রক্ত দেখা যেতে পারে।
  • পেটে ব্যথা: পেটে ব্যথা অনুভব করতে পারে।
  • বমি বমি ভাব বা বমি: কখনও কখনও বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
  • খাবার অনীহা: খাবার খেতে ইচ্ছা না করা।
  • অন্যান্য: অস্বস্তি, কাঁপুনি, অবসাদগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি।

নির্ণয়

ডাক্তার শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এরপর নিম্নলিখিত পরীক্ষা করতে পারেন:

  • মূত্র পরীক্ষা: মূত্রে সংক্রমণের লক্ষণ দেখতে।
  • রক্ত পরীক্ষা: সংক্রমণের তীব্রতা মাপতে।
  • আল্ট্রাসাউন্ড: মূত্রনালীর গঠন পরীক্ষা করতে।
  • মূত্রের কালচার: কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করেছে তা জানতে।

চিকিৎসা

মূত্রনালীর সংক্রমণের চিকিৎসা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে করা হয়। ডাক্তার সংক্রমণের ধরন এবং তীব্রতার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিকের ধরন এবং মাত্রা নির্ধারণ করবেন।

সার্জারি কখন প্রয়োজন হতে পারে?

  • মূত্রনালীর গঠনগত সমস্যা: যদি মূত্রনালীর কোনো জন্মগত সমস্যা থাকে, তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
  • মূত্রনালীতে বাধা: মূত্রনালীতে পাথর বা টিউমার থাকলে সার্জারি করে তা অপসারণ করতে হয়।

জটিলতা

যদি মূত্রনালীর সংক্রমণ চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে কিডনি, মূত্রনালী এবং অন্যান্য অঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও, সেপসিস নামক একটি জীবনঘাতী অবস্থা হতে পারে।

প্রতিরোধ

  • সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: হাত সবসময় পরিষ্কার রাখা, প্রস্রাব করার পর সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে মুছা ইত্যাদি।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে মূত্রনালী পরিষ্কার থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
  • ঢিলাঢালা পোশাক পরা: টাইট পোশাক পরিধান না করা।
  • জন্মগত সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: যদি শিশুর জন্মগত কোনো মূত্রনালীর সমস্যা থাকে, তাহলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার:

শিশুদের মূত্রনালীর সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। যদি আপনার শিশু উপরের কোনো লক্ষণ দেখায়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।