হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি বা এইচ. পাইলোরি নামে একটি ব্যাকটেরিয়া পেটের আলসারের প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। একসময় ধারণা করা হতো যে, পেটের অ্যাসিডই পেটের আলসারের জন্য দায়ী। কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা গেছে, এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী। এই ব্যাকটেরিয়াটি পাকস্থলীর আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আলসার তৈরি করে।
এইচ. পাইলোরি কী?
এইচ. পাইলোরি একটি ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা পাকস্থলীর অ্যাসিডিক পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানি পান করার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
এইচ. পাইলোরি এবং পেটের আলসারের সম্পর্ক
এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর আস্তরণে আক্রমণ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের ফলে পাকস্থলীর আস্তরণে ছোট ছোট ঘা বা আলসার তৈরি হয়। এই আলসারগুলি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং রক্তপাতের কারণও হতে পারে।
এইচ. পাইলোরি সংক্রমণের লক্ষণ
- পেটে ব্যথা, বিশেষ করে খালি পেটে
- বমি বমি ভাব
- বমি
- অপচয়
- ক্ষুধামান্দ্য
- গাঢ় রঙের মল
- কালো বমি
মনে রাখবেন: অনেক লোকের এইচ. পাইলোরি সংক্রমণ থাকলেও কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে।
এইচ. পাইলোরি সংক্রমণের নির্ণয়
- ইউরিয়া শ্বাস পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় রোগীকে একটি বিশেষ দ্রব্য পান করতে হয় এবং তারপর শ্বাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ মাপা হয়।
- মল পরীক্ষা: মলের নমুনায় এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পরীক্ষা করা হয়।
- এন্ডোস্কোপি: একটি পাতলা টিউব ব্যবহার করে পাকস্থলীর ভিতরের দিক পরীক্ষা করা হয় এবং একটি ছোট নমুনা নেওয়া হয়।
এইচ. পাইলোরি সংক্রমণের চিকিৎসা
এইচ. পাইলোরি সংক্রমণের চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং অ্যাসিড-রোধী ওষুধের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
এইচ. পাইলোরি সংক্রমণ প্রতিরোধ
- স্বাস্থ্যকর খাবার: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার খাওয়া।
- পানির গুণগত মান: পরিষ্কার পানি পান করা।
- হাইজিন: হাত সবসময় পরিষ্কার রাখা।
উপসংহার
হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যা পেটের আলসারের প্রধান কারণ। এই ব্যাকটেরিয়াটির চিকিৎসা সম্ভব। তাই, উপরোক্ত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।