হাইপোথাইরয়েডিজম বা কম থাইরয়েড হল এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিপাক, হৃদস্পন্দন, শারীরিক তাপমাত্রা এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণ
হাইপোথাইরয়েডিজমের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এর মধ্যে অন্যতম হল:
- হাশিমোটোর থাইরয়েডিটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে।
- থাইরয়েড সার্জারি: থাইরয়েড গ্রন্থির সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ অপসারণের পরে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।
- রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপি: হাইপারথাইরয়েডিজম চিকিৎসার জন্য এই থেরাপি ব্যবহার করলে থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।
- পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা: পিটুইটারি গ্রন্থি থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) উৎপাদন করে, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। যদি পিটুইটারি গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণ TSH উৎপাদন না করে তাহলে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- ক্লান্তি
- ওজন বৃদ্ধি
- শীত অনুভূতি
- ত্বক শুষ্ক হওয়া
- চুল পড়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মাসিকের সমস্যা
- মুখ ফুলে যাওয়া
- পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা
- মনোযোগ কেন্দ্রীকরণে সমস্যা
- বিষণ্নতা
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসার জন্য সাধারণত থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হয়। এই থেরাপিতে মুখে খাওয়ার গোলিতে থাইরয়েড হরমোন দেওয়া হয়। ডাক্তার রোগীর শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
হাইপোথাইরয়েডিজমের জীবনযাপন
হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি:
- নিয়মিত চেকআপ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করা।
- ওষুধ সেবন: ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য খাওয়া।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- তनाव মুক্ত থাকা: যোগ, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে তनाव কমানো।
মনে রাখবেন: হাইপোথাইরয়েডিজম একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।