সুস্থতা বলতে শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক সুস্থতাকেও বোঝায়। তাই সুস্থতার জন্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু শারীরিক সুস্থতাকে আমরা যতটা গুরুত্ব দেই মানসিক সুস্থতাকে আমরা ততটা গুরুত্ব দেই না। সময় মত যদি মানসিক চিকিৎসা করা হয় তাহলে মানসিক সমস্যাগুলো এত বড় হয় না। যেমন : একজন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এ ভুগছেন, তিনি যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না নেন তাহলে তা কয়েক বছর পর ওসিডি তে রূপ নিতে পারে এবং এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ানক মানসিক সমস্যায় পড়তে পারেন। প্রথম দিকে তিনি যদি একজন কাউন্সিলারের সাহায্য নিতেন তাহলে হয়তো তার কোন ওষধই লাগতো না শুধু কাউন্সিলিংই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কাউন্সিলর এর কাছে না গিয়ে ভেতরে মানসিক রোগ পুষে রাখায় তার সমস্যা আরো জটিল হয়ে গেল এবং পরবর্তীতে তার সেরে উঠতে অনেক ওষুধ এবং জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।
তাই শারীরিক অসুস্থতায় যেমন আমরা ডাক্তারের সাহায্য নেই তেমনি মানসিক অসুস্থতায়ও আমাদের উচিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
আজকাল আমরা অনেকেই মানসিক রোগের চিকিৎসায় কাউন্সিলিং শব্দটা শুনে থাকি। কাউন্সিলিং সম্পর্কে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা থাকে। তাহলে আমরা প্রথমে জেনে নেই কাউন্সিলিং কি?
#কাউন্সিলিং কি?
কাউন্সিলিং হল কাউন্সিলর ও কাউন্সিলিং সেবা গ্রহীতার (client) মধ্যকার একটি পেশাদারী সম্পর্ক। এখানে ক্লায়েন্টের চিন্তা, আবেগ সম্বন্ধীয়, ও আচরণগত যেসব সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। এখানে কাউন্সিলর তার সেবা গ্রহীতাকে এমনভাবে সহায়তা করেন যাতে সেবা গ্রহীতা তার মনোসামাজিক কর্মক্ষমতার সর্বোপরি কাম্য অবস্থায় যেতে পারেন এবং সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারেন।
কাউন্সিলিং সেবায় সেবা গ্রহীতা নিজের মনোভাব, চিন্তা, অনুভূতি, গোপনীয়তার সাথে কাউন্সিলর এর কাছে প্রকাশ করতে পারেন। এবং যেহেতু কাউন্সিলর নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে তার কথা শুনেন সেহেতু সেবা গ্রহীতাও নির্দ্বিধায় তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন।
#কখন কাউন্সেলিং সেবা নিব?
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে কখন আমরা কাউন্সেলিং সেবা নিব বা কারা কাউন্সেলিং সেবা নিবে?
আসলে আমরা যে কেউই জীবনের যে কোন মুহূর্তে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারি। এর জন্য যে মানসিক ভাবে প্রচন্ড অসুস্থ হতে হবে এমনটি নয়। নিজেদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্যও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেউ যদি মনে করে জীবনে কিছু দক্ষতা অর্জন করবে, যেমন: নন ভায়োলেন্ট কমিউনিকেশন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, নিজের সম্পর্কের উন্নতি, মানসিক চাপ সঠিকভাবে মোকাবেলা করার দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সঠিক প্যারেন্টিং স্টাইল- সেক্ষেত্রেও কাউন্সিলর এ সকল দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারেন।
সুতরাং কারো যদি কোন চিন্তা, আবেগ সম্বন্ধীয়, অথবা আচরণগত কোন সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে তার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ে অথবা জীবনে কোন মানসিক দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন।
#কাউন্সিলিং কেন প্রয়োজন?
জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া সম্ভব। সাধারণত যে সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায় তা নিচে তুলে ধরা হলো –
- চিন্তা সম্বন্ধীয় সমস্যা
অনেক সময় অনেকের চিন্তার ধরন অনেক বেশি নেতিবাচক হয়। বিশেষ করে ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে। যেমন আপনি কাউকে ফোন দিলেন সে কোন কারণে ফোন ধরতে পারল না। যে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে আছে সে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে মনে মনে ধরে নিতে পারে তার ফোন উপেক্ষা করল। সে তখন অন্যান্য সম্ভাবনা গুলো দেখতে চাই না। যেমন এমনও তো হতে পারে যে, যাকে ফোন দেওয়া হল সে হয়তো তখন ব্যস্ত ছিল অথবা তার ফোন সাইলেন্ট ছিল। যাদের চিন্তা নেতিবাচক তারা ঘটনার ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলো দেখতে চাই না। কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা গুলো পরিবর্তন করা সম্ভব। - আবেগ সম্বন্ধীয় সমস্যা :
অনেক সময় অনেকে নিজের আবেগ সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে না। অন্যের আবেগের সাথে সাথে নিজের আবেগও ঠিক মতন বুঝতে পারে না। কেউ কেউ হয়তো অল্পতে রেগে যায় আবার কেউ কেউ হয়তো অনেক দুঃখেও নিজের কষ্টগুলোকে আটকে রাখে। এ সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং সেবা তার নিজের আবেগ বুঝতে ও প্রকাশ করতে এবং অন্যের আবেগ বুঝতে ও অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারে। - আচরণগত সমস্যা :
কারো যদি আচরণগত সমস্যা থাকে, যেমন: নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি উদ্বেগ অনুভব করা, অতিরিক্ত ভয়, রাগের কারনে হঠাৎ বিস্ফোরণ, ময়লার ভয়ে বারবার হাত ধোয়া, ইত্যাদি তাহলে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। - মানসিক চাপ :আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কমবেশি মানসিক চাপ থাকে। সাধারণত এ সকল মানসিক চাপগুলো আমরা নিজেরাই সামলে উঠতে পারি। আবার অনেক সময় সামলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পরি। এ সকল মানসিক চাপ কিভাবে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে হয় সেই দক্ষতা যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে জীবনধারণ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হলে :
অনেক সময় দেখা যায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এ সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা হয়।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ক্ষেত্রেই কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায়। যেমন: সন্তান লালন পালনে সঠিক পদ্ধতি, মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসা, ঘুমের সমস্যা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, হীনমন্যতা দূর, নিজের সম্পর্ক গুলোর উন্নতি ইত্যাদি।