মুখের ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ যা মুখের বিভিন্ন অংশে, যেমন ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালের ভেতরের আবরণ, তালু, লালা গ্রন্থি ও টনসিলে হতে পারে। যদিও এই রোগ ভয়ঙ্কর, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি নিরাময় করা সম্ভব। মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার পদ্ধতি রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন, আকার, অবস্থান এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে।
মুখের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়:
- সার্জারি: মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসায় সার্জারি একটি সাধারণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সারগ্রস্ত টিস্যু এবং তার আশেপাশের কিছু স্বাস্থ্যকর টিস্যু অপসারণ করা হয়। সার্জারির পরে, ক্ষত সারাতে এবং মুখের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে পুনর্গঠন সার্জারি করা হতে পারে।
- রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপিতে উচ্চ-শক্তির এক্স-রে বা অন্যান্য ধরণের রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সার্জারির আগে, পরে বা একা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপিতে শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। এই ওষুধগুলি সাধারণত শিরায় ইনজেকশন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অংশকে লক্ষ্য করে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি স্বাভাবিক কোষগুলোকে ক্ষতি না করে কেবল ক্যান্সার কোষগুলোকেই ধ্বংস করে।
- ইমিউনোথেরাপি: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করা হয়।
চিকিৎসার পরে যত্ন
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার পরে রোগীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে:
- মুখের যত্ন: চিকিৎসার পরে মুখের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত পরিষ্কার করা, গার্গল করা এবং মুখে আঁচিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- পুষ্টি: চিকিৎসার কারণে রোগীর খাওয়া-দাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- নিয়মিত পরীক্ষা: চিকিৎসার পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং পরীক্ষা করানো জরুরি।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার মুখে কোনো ধরনের ঘা, ফোস্কা, সাদা দাগ বা লাল দাগ দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়াও, যদি আপনার মুখে ব্যথা, ফোলা, বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়, তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সারসংক্ষেপ
মুখের ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ হলেও, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি নিরাময় করা সম্ভব। মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন, আকার, অবস্থান এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। তাই, যদি আপনার মুখে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।