টনসিলাইটিস: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং জটিলতা

টনসিলাইটিস

টনসিলাইটিস হল টনসিলের সংক্রমণ (Infection) বা প্রদাহ (Inflammation)। টনসিল দুটি ডিম্বাকৃতির লিম্ফ গ্লান্ড যা গলার পেছনে অবস্থিত। এটি সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়।

টনসিলাইটিসের উপসর্গ:

  • গলা ব্যথা
  • ফোলা, লাল টনসিল (কখনও কখনও সাদা বা হলুদ আবরণসহ)
  • গিলতে কষ্ট হওয়া
  • জ্বর
  • গলার লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
  • মুখে দুর্গন্ধ
  • কানে ব্যথা

কারণ:

  • ভাইরাসজনিত সংক্রমণ: সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এপস্টিন-বার ভাইরাস, ইত্যাদি।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ: সাধারণত স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়।

চিকিৎসা:

  • ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিস: সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়; বিশ্রাম, প্রচুর পানি পান ও ব্যথানাশক ওষুধ উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস: অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা প্রয়োজন যাতে জটিলতা এড়ানো যায়।
  • গুরুতর বা বারবার আক্রান্ত হলে: টনসিল অপসারণের অস্ত্রোপচার (টনসিলেক্টোমি) লাগতে পারে।

টনসিলাইটিসের জটিলতা

যদি টনসিলাইটিস সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয় বা গুরুতর হয়, তাহলে এটি বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি স্ট্রেপটোকোকাস (Streptococcus) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে।

. পেরিটনসিলার অ্যাবসেস (Peritonsillar Abscess)

  • টনসিলের পাশে পুঁজ জমে একটি ফোড়া তৈরি হয়
  • তীব্র গলা ব্যথা, গিলতে কষ্ট এবং মুখ খোলায় সমস্যা হতে পারে।
  • চিকিৎসার জন্য পুঁজ বের করা ও অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হতে পারে।

. শ্বাসপ্রশ্বাস ও গিলতে সমস্যা

  • ফোলা টনসিল শ্বাসনালী আংশিক বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট (স্লিপ অ্যাপনিয়া) হতে পারে
  • খাবার বা পানি গিলতে কষ্ট হতে পারে, যা ডিহাইড্রেশনের (পানিশূন্যতা) ঝুঁকি বাড়ায়

. সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া (গলা থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া)

  • রিউমাটিক জ্বর (Rheumatic Fever) – যদি স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এটি হৃদযন্ত্র, জয়েন্ট, ত্বক এবং মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে
  • পোস্টস্ট্রেপটোকোকাল গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (Post-Streptococcal Glomerulonephritis) – এটি স্ট্রেপটোকোকাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে
  • স্কারলেট জ্বর (Scarlet Fever) – এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যা লাল ফুসকুড়ি, জ্বর ও গলা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে
  • সেপ্টিসেমিয়া (Sepsis) – খুব কম ক্ষেত্রে, সংক্রমণ রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে গিয়ে জীবনসংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে

. দীর্ঘস্থায়ী টনসিলাইটিস (Chronic Tonsillitis)

  • বারবার টনসিলাইটিস হলে গলা দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমিত ও প্রদাহগ্রস্ত থাকতে পারে
  • এই অবস্থায় টনসিল অপসারণ (টনসিলেক্টোমি) প্রয়োজন হতে পারে

 

বেডসোর: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

বেডসোর, যাকে প্রেশার আলসার বা ডেকুবিটাস আলসারও বলা হয়, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা দীর্ঘ সময় ধরে শয্যাশায়ী বা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ত্বক ও নিচের টিস্যুগুলির উপর চাপের কারণে হয়, যা রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত করে এবং টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে। বেডসোরের সঠিক পরিচর্যা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেডসোরের কারণ

বেডসোর মূলত নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য হয়:

১ . দীর্ঘ সময় ধরে চাপ: একই অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে বা বসে থাকলে ত্বক ও টিস্যুতে চাপ পড়ে।

২ . ঘর্ষণ: বিছানা বা হুইলচেয়ারের সাথে ত্বকের ঘর্ষণের ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

৩. আর্দ্রতা: ঘাম বা মূত্রের সংস্পর্শে ত্বক নরম হয়ে ক্ষতের ঝুঁকি বাড়ে।

৪ .রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া: ডায়াবেটিস বা রক্তনালীর রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে বেডসোরের ঝুঁকি বাড়ে।

৫ . পুষ্টির অভাব: প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে ত্বক দুর্বল হয়ে পড়ে।

বেডসোরের লক্ষণ

বেডসোরের লক্ষণগুলি ধাপে ধাপে দেখা দেয়:

১ . প্রথম পর্যায়: ত্বক লাল হয়ে যায় এবং স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হয়।

২ . দ্বিতীয় পর্যায়: ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফোসকা বা খোলা ঘা দেখা দেয়।

৩ . তৃতীয় পর্যায়: ক্ষত ত্বকের নিচের টিস্যু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

৪. চতুর্থ পর্যায়: ক্ষত পেশি, হাড় বা জোড় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

বেডসোরের চিকিৎসা

বেডসোরের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্ষতের গভীরতা ও অবস্থানের উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  • ক্ষত পরিষ্কার করা: ক্ষতস্থান জীবাণুমুক্ত করে ড্রেসিং প্রয়োগ করা।
  • চাপ কমানো: বিশেষ ম্যাট্রেস বা কুশন ব্যবহার করে চাপ কমানো।
  • ওষুধ:সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা ক্ষত নিরাময়ের জন্য বিশেষ ক্রিম ব্যবহার করা।
  • সার্জারি:গভীর ক্ষতের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্লাষ্টিক সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে প্রয়োজন হতে পারে।

বেডসোরের প্রতিকার প্রতিরোধ

বেডসোর প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন:শয্যাশায়ী রোগীদের প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর পজিশন পরিবর্তন করুন।
  • স্পেশাল ম্যাট্রেস ব্যবহার:এয়ার বা ফোম ম্যাট্রেস ব্যবহার করে চাপ কমানো।
  • ত্বক পরিষ্কার শুষ্ক রাখা:নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • পুষ্টিকর খাবার:প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার খান।

নিয়মিত চেকআপ: ত্বকের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

  • ত্বক লাল হয়ে ফুলে গেলে
  • ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা গন্ধ বের হলে
  • জ্বর বা ব্যথা হলে
  • ক্ষত নিরাময় না হলে বা খারাপ হলে

বেডসোর একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সঠিক যত্ন ও সচেতনতা এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। শয্যাশায়ী রোগীদের বিশেষ যত্ন নিন এবং তাদের ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখুন।

 

মমি মেকওভার: টামি টাক ও ব্রেস্ট লিফ্ট

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা, কিন্তু গর্ভাবস্থা ও সন্তান প্রসবের পর অনেক নারীই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে আত্মবিশ্বাস হারান। মমি মেকওভার বা ম্যাটারনিটি মেকওভার হলো এমন একটি প্লাস্টিক সার্জারি প্যাকেজ, যা গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী শারীরিক পরিবর্তনগুলি ঠিক করতে সাহায্য করে। এই প্যাকেজে সাধারণত টামি টাক (পেটের চামড়া টাইট করা) এবং ব্রেস্ট লিফ্ট (স্তন উঁচু করা) অন্তর্ভুক্ত থাকে।

মমি মেকওভার কী?

মমি মেকওভার হলো একাধিক প্লাস্টিক সার্জারির সমন্বয়, যা গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী শারীরিক পরিবর্তনগুলি ঠিক করে। এর মধ্যে প্রধান দুটি পদ্ধতি হলো:

১ . টামি টাক (অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি): পেটের অতিরিক্ত চামড়া ও ফ্যাট সরিয়ে পেট টাইট ও সমতল করা।

২ . ব্রেস্ট লিফ্ট (মাস্টোপেক্সি): স্তনকে উঁচু করে আকৃতি ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা।

টামি টাক (অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি)

গর্ভাবস্থায় পেটের চামড়া ও পেশী প্রসারিত হয়, যা প্রসবের পর ঢিলে হয়ে যায়। টামি টাক পদ্ধতিতে:

  • পেটের অতিরিক্ত চামড়া ও ফ্যাট সরানো হয়।
  • পেটের পেশী টাইট করা হয়।
  • পেটের আকৃতি সমতল ও টোনড করা হয়।

সুবিধা:

  • পেটের চামড়া ও ফ্যাট কমে যায়।
  • শরীরের আকৃতি ফিরে পায়।
  • আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

ব্রেস্ট লিফ্ট (মাস্টোপেক্সি)

স্তন্যদান ও গর্ভাবস্থার কারণে স্তন ঢিলে হয়ে যায় এবং আকৃতি হারায়। ব্রেস্ট লিফ্ট পদ্ধতিতে:

  • স্তনের অতিরিক্ত চামড়া সরানো হয়।
  • ঝুলে যাওয়া স্তনকে উঁচু করে আকৃতি ফিরিয়ে আনা হয়।
  • নিপলের অবস্থান ঠিক করা হয়।

সুবিধা:

  • স্তনের আকৃতি ও সৌন্দর্য ফিরে পায়।
  • স্তন উঁচু ও টোনড হয়।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

কে মমি মেকওভারের জন্য উপযুক্ত?

  • যারা গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে অসন্তুষ্ট।
  • যারা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রেখেছেন।
  • যারা আর সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না।

সার্জারির পর যত্ন

  • নিয়মিত বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও ড্রেসিং পরিবর্তন।
  • ভারী কাজ এড়িয়ে চলা।

কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন?

  • গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে।
  • টামি টাক বা ব্রেস্ট লিফ্ট নিয়ে আলোচনা করতে।

মমি মেকওভার নারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে এবং তাদের শারীরিক সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার করে। এটি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে।

 

লাইপোসাকশন: অতিরিক্ত চর্বি দূর করার একটি পদ্ধতি

লাইপোসাকশন হল একটি কসমেটিক সার্জারি যার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ কিছু অংশ থেকে অতিরিক্ত চর্বি দূর করা হয়। এই পদ্ধতিটি সাধারণত সেইসব এলাকায় করা হয় যেখানে ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে চর্বি কমানো কঠিন হয়, যেমন পেট, উরু, বাহু ইত্যাদি।

লাইপোসাকশন কেন করা হয়?

  • শরীরের আকৃতি সুন্দর করা: লাইপোসাকশন করার মাধ্যমে শরীরের আকৃতি সুন্দর করা যায় এবং একটি সুগঠিত চেহারা পাওয়া যায়।
  • স্থূলতা কমানো: যদিও লাইপোসাকশন স্থূলতার চিকিৎসা নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থূল ব্যক্তির শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশ থেকে অতিরিক্ত চর্বি দূর করে শরীরের আকৃতি সুন্দর করা যায়।
  • চর্বি কোষ ধ্বংস করা: লাইপোসাকশন করার মাধ্যমে চর্বি কোষ ধ্বংস করা হয় যাতে আবার সেখানে চর্বি জমতে না পারে।

লাইপোসাকশনের ধরন

লাইপোসাকশনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন:

  • টামিসেন্ট  লাইপোসাকশন: এই পদ্ধতিতে একটি খুব পাতলা টিউব ব্যবহার করে চর্বি আকারে শরীর থেকে বের করা হয়।
  • লেজার লাইপোসাকশন: এই পদ্ধতিতে লেজার ব্যবহার করে চর্বি কোষগুলোকে ভেঙে দেওয়া হয় এবং তারপর তা শরীর থেকে বের করা হয়।
  • আল্ট্রাসাউন্ড লাইপোসাকশন: এই পদ্ধতিতে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গ ব্যবহার করে চর্বি কোষগুলোকে ভেঙে দেওয়া হয়।

লাইপোসাকশনের আগে, পরে এবং সম্ভাব্য জটিলতা

লাইপোসাকশনের আগে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি। ডাক্তার রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং লাইপোসাকশনের জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করবেন।

লাইপোসাকশনের পরে রোগীকে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হবে এবং কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

লাইপোসাকশনের কিছু সম্ভাব্য জটিলতা হল:

  • সংক্রমণ
  • রক্তপাত
  • স্থানীয় অবেদন বা সাধারণ অবেদনের জটিলতা
  • অসমতলতা বা অনিয়মিততা
  • ফোলা এবং ব্যথা

লাইপোসাকশন কার জন্য উপযুক্ত?

লাইপোসাকশন সাধারণত স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত যারা ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে চর্বি কমানোর পরেও অতিরিক্ত চর্বির সমস্যায় ভুগছেন। যাদের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি, তাদের জন্য লাইপোসাকশন করা উচিত নয়।

উপসংহার

লাইপোসাকশন একটি কসমেটিক সার্জারি যা শরীরের আকৃতি সুন্দর করতে সাহায্য করে। তবে এই সার্জারি করার আগে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি এবং সার্জারির সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানা উচিত।

 

 

ক্যান্সার নির্ণয়ে রেডিওলোজির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: এভারকেয়ারের অগ্রণী উদ্যোগ

ক্যান্সার, একটি ভয়াবহ রোগ। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি এটি ধরা পড়ে, ততই চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর এই কাজে রেডিওলোজি বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভার কেয়ার হাসপাতালের মতো আধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষেত্রে অনন্য সেবা দিয়ে আসছে।

রেডিওলোজি: ক্যান্সার নির্ণয়ের মূল চাবিকাঠি

রেডিওলোজি হলো চিকিৎসার এমন একটি শাখা যেখানে বিভিন্ন ধরনের ইমেজিং পরীক্ষা যেমন এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি ব্যবহার করে শরীরের ভিতরের ছবি তৈরি করা হয়। এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে ডাক্তাররা ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগ নির্ণয় করতে পারেন।

  • ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়: রেডিওলোজি পরীক্ষাগুলো ক্যান্সারের খুব ছোট টিউমার পর্যন্ত ধরতে পারে, যখন রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। এই পর্যায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা অনেক সহজ এবং সফলতার সম্ভাবনাও বেশি।
  • টিউমারের আকার অবস্থান নির্ণয়: রেডিওলোজি পরীক্ষাগুলো টিউমারের আকার, অবস্থান এবং আশেপাশের অঙ্গের সাথে সম্পর্ক নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন।
  • ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়ার পরীক্ষা: রেডিওলোজি পরীক্ষাগুলো ক্যান্সার কোষ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে পারে।

এভার কেয়ার হাসপাতালে ক্যান্সারের রোগীদের সেবা

এভার কেয়ার হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগ ক্যান্সার রোগীদের জন্য বিশেষ সেবা প্রদান করে। তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের সাহায্যে রোগীদের সঠিক ও দ্রুত নির্ণয় করতে সহায়তা করে।

  • আধুনিক যন্ত্রপাতি: এভার কেয়ার হাসপাতালে সর্বশেষ প্রযুক্তির এমআরআই, সিটি স্ক্যান, পেট সিটি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি রয়েছে যা অত্যন্ত স্পষ্ট ও বিস্তারিত ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
  • দক্ষ চিকিৎসক: বিভাগে অভিজ্ঞ ও দক্ষ রেডিওলোজিস্টরা রয়েছেন যারা রোগীর ছবি বিশ্লেষণ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
  • দ্রুত রিপোর্ট: রোগীদের স্বার্থে রেডিওলোজি রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করা হয়।
  • পরামর্শ: রোগীরা যে কোনো ধরনের রেডিওলোজিক্যাল পরীক্ষার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারেন।

ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের রেডিওলোজিক্যাল ইমেজিং

  • ফুসফুসের ক্যান্সার: সিটি স্ক্যান, পেট সিটি
  • মস্তিষ্কের টিউমার: এমআরআই
  • স্তন ক্যান্সার: ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই
  • পাকস্থলীর ক্যান্সার: আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান
  • প্রোস্টেট ক্যান্সার: আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই

উপসংহার:

ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং সফল চিকিৎসার জন্য রেডিওলোজির ভূমিকা অপরিহার্য। এভার কেয়ার হাসপাতালের মতো আধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের এই ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করে। তাই যদি আপনার কোনো ধরনের ক্যান্সারের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় রেডিওলোজিক্যাল পরীক্ষা করান।

 

প্লাস্টিক সার্জারি: ভুল ধারণা দূর করুন

প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। এই ভুল ধারণাগুলো অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। আসুন, এই ভুল ধারণাগুলো দূর করে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ভুল ধারণা ১: প্লাস্টিক সার্জারি শুধুমাত্র সুন্দর দেখাতে হয়

সত্যি কথা: প্লাস্টিক সার্জারি শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এটি একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া। জন্মগত ত্রুটি, দুর্ঘটনা, ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগের কারণে শরীরের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুনর্গঠনের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।

ভুল ধারণা ২: প্লাস্টিক সার্জারি খুব ব্যয়বহুল

সত্যি কথা: প্লাস্টিক সার্জারির খরচ নির্ভর করে সার্জারির ধরন, সার্জনের অভিজ্ঞতা এবং আপনি কোন হাসপাতালে সার্জারি করছেন তার উপর। আজকাল অনেক হাসপাতালেই প্লাস্টিক সার্জারির সুবিধা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট প্ল্যানও পাওয়া যায়।

ভুল ধারণা ৩: প্লাস্টিক সার্জারি করলে অস্বাভাবিক দেখাবে

সত্যি কথা: একজন দক্ষ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে আপনার চেহারা অস্বাভাবিক দেখাবে না। সার্জন আপনার মুখের অন্যান্য অংশের সাথে মিল রেখে সার্জারি করবেন।

ভুল ধারণা ৪: প্লাস্টিক সার্জারি খুব ব্যথা হয়

সত্যি কথা: সার্জারির সময় আপনাকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়, তাই আপনি কোনো ব্যথা অনুভব করবেন না। সার্জারির পর কিছুটা ব্যথা হতে পারে, কিন্তু ওষুধের সাহায্যে তা কমিয়ে আনা যায়।

ভুল ধারণা ৫: প্লাস্টিক সার্জারি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ

সত্যি কথা: সব ধরনের সার্জারির মতো প্লাস্টিক সার্জারিরও কিছু ঝুঁকি রয়েছে। যেমন সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। তবে একজন অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে এই ঝুঁকি কমে যায়।

ভুল ধারণা ৬: প্লাস্টিক সার্জারি করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে

সত্যি কথা: প্লাস্টিক সার্জারি আপনার শারীরিক চেহারা উন্নত করতে পারে, কিন্তু এটি আপনার সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আপনার আত্মবিশ্বাসের সমস্যা থাকলে, প্লাস্টিক সার্জারির পাশাপাশি মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেওয়া ভালো।

প্লাস্টিক সার্জারি করার আগে

  • সঠিক সার্জন খুঁজুন: একজন অভিজ্ঞ এবং যোগ্য প্লাস্টিক সার্জনের কাছে চিকিৎসা করান।
  • সার্জারির সম্পূর্ণ তথ্য জানুন: সার্জারির পদ্ধতি, ঝুঁকি এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
  • অন্যের পরামর্শ নিন: আপনার পরিবার বা বন্ধুদের সাথে কথা বলুন।
  • আপনার আশা বাস্তবসম্মত রাখুন: প্লাস্টিক সার্জারি আপনাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিতে পারবে না।

শেষ কথা: প্লাস্টিক সার্জারি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবুন এবং একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন: একটি স্বাস্থ্যকর হৃদয়ের দিকে

হৃদরোগ, আজকের সমাজে একটি ব্যাপক সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। তবে ভালো খবর হল, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারি।

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস:

  • ফল সবজি: রঙিন ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • সম্পৃক্ত চর্বি কমান: মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে। এই ধরনের চর্বি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • আঁশযুক্ত খাবার: আঁশযুক্ত খাবার (যেমন: ওটস, বাদাম, ফল, সবজি) রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • সোডিয়াম কমান: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া রক্তচাপ বাড়ায়, যা হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ।
  • পানি বেশি পান করুন: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

নিয়মিত ব্যায়াম:

  • এয়ারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি এয়ারোবিক ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্তচাপ কমায়।
  • শক্তিবৃদ্ধি ব্যায়াম: ওজন তোলা বা রেজিস্টেন্স ব্যান্ড ব্যবহার করে শরীরের পেশি শক্তিশালী করা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মধ্যম তীব্রতার ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মধ্যম তীব্রতার ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

ধূমপান ত্যাগ:

  • ধূমপান হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। ধূমপান ত্যাগ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ:

  • অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার একটি প্রধান কারণ। সুস্থ খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।

মানসিক চাপ কমান:

  • দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যোগ, ধ্যান বা অন্য কোনো শিথিলকরণ কৌশল অবলম্বন করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ:

  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করান।

উপসংহার:

হৃদরোগ একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, জীবনযাত্রায় কিছু সামান্য পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারি। সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ হৃদয় এবং দীর্ঘ জীবন উপভোগ করতে পারি।

 

ডায়াবেটিক ফুট: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ডায়াবেটিক ফুট বা ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের সমস্যা একটি জটিল ও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সাধারণ। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ডায়াবেটিক ফুটের কারণ হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এই সমস্যা সংক্রমণ, গ্যাংগ্রিন বা এমনকি অঙ্গচ্ছেদের কারণ হতে পারে।

ডায়াবেটিক ফুটের কারণ

ডায়াবেটিক ফুটের প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব:

  • স্নায়ু ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি):ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ব্যথা, তাপ বা ঠান্ডার অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
  • রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া:ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয়, যা পায়ে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং ক্ষত নিরাময়কে ধীর করে দেয়।
  • সংক্রমণ:স্নায়ু ক্ষতি ও রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে পায়ে ক্ষত বা ঘা সহজে সংক্রমিত হয়।

ডায়াবেটিক ফুটের লক্ষণ

ডায়াবেটিক ফুটের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে দেখা দেয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব
  • পায়ে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
  • পায়ের ত্বক শুষ্ক ও ফাটা
  • পায়ে ক্ষত বা ঘা যা সহজে শুকায় না
  • পায়ের আঙ্গুল বা গোড়ালিতে ফোলা বা লালভাব
  • পায়ের গঠনে পরিবর্তন (যেমন: হ্যামার টো)

ডায়াবেটিক ফুটের চিকিৎসা

ডায়াবেটিক ফুটের চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার তীব্রতার উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

 

ক্ষত পরিচর্যা:

    • ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করা।
    • বিশেষ ড্রেসিং বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম প্রয়োগ।

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা:

    • রক্তনালী প্রসারিত করার জন্য ওষুধ বা সার্জারি।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ:

    • অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বা ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি।

অঙ্গচ্ছেদ:

    • গ্যাংগ্রিন বা গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে অঙ্গচ্ছেদ প্রয়োজন হতে পারে।

 

ডায়াবেটিক ফুটের প্রতিকার প্রতিরোধ

ডায়াবেটিক ফুট প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

নিয়মিত পায়ের যত্ন:

    • প্রতিদিন পা পরিষ্কার করে শুষ্ক রাখুন।
    • পায়ের ত্বক নরম রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

পায়ের পরীক্ষা:

    • প্রতিদিন পায়ের তল, আঙ্গুল ও গোড়ালি পরীক্ষা করুন।
    • কোনো ক্ষত, ফাটা বা পরিবর্তন দেখলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সঠিক জুতা ব্যবহার:

    • আরামদায়ক ও ফিট জুতা পরুন।
    • টাইট জুতা বা হাই হিল এড়িয়ে চলুন।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ:

    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
    • নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।

ধূমপান অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন:

    • ধূমপান ও অ্যালকোহল রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিক ফুটের ঝুঁকি বাড়ায়।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

  • পায়ে ক্ষত বা ঘা যা শুকায় না
  • পায়ে ফোলা, লালভাব বা গরম অনুভূতি
  • পায়ে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
  • পায়ের গঠনে পরিবর্তন

ডায়াবেটিক ফুট একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সঠিক যত্ন ও সচেতনতা এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত পায়ের যত্ন নেওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনুন: সার্জারির জাদু

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, বলিরেখা ও দাগের উপস্থিতি, ত্বকের শিথিলতা ইত্যাদি সমস্যা সবার কাছেই পরিচিত। এই সমস্যাগুলো অনেকের মনেই আত্মবিশ্বাসের সংকট তৈরি করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হয়েছে। সার্জারির মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা ও তরুণতার ছাপ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে কী কী পরিবর্তন হয়?

  • কোলাজেন ইলাস্টিনের পরিমাণ কমে যাওয়া: কোলাজেন ও ইলাস্টিন দুটি প্রোটিন যা ত্বককে টানটান ও স্থিতিস্থাপক রাখে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই দুটি প্রোটিনের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ত্বক শিথিল হয়ে পড়ে এবং বলিরেখা ও দাগ দেখা দেয়।
  • ত্বকের কোষের নবায়ন কমে যাওয়া: ত্বকের কোষ নিয়মিত নবায়ন হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই নবায়ন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়।
  • চর্বি কমে যাওয়া: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের নিচের চর্বি কমে যায় ফলে ত্বক শুষ্ক ও ঝুলে পড়ে।
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে, বলিরেখা ও দাগ তৈরি করে এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

সার্জারির মাধ্যমে ত্বকের উন্নতি

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ত্বকের সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সার্জারি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • ফেসলিফট: এই সার্জারির মাধ্যমে মুখের ত্বককে টানটান করে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনা হয়।
  • ব্লেফারোপ্লাস্টি: এই সার্জারির মাধ্যমে চোখের পাতার অতিরিক্ত চর্বি বা ত্বক অপসারণ করে চোখকে বড় ও উজ্জ্বল করা হয়।
  • রাইনোপ্লাস্টি: এই সার্জারির মাধ্যমে নাকের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করে নাককে আরও সুন্দর করা হয়।
  • ডার্মাব্রেশন: এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ত্বকের উপরের স্তর অপসারণ করে নতুন রূপ দেয়া  হয়।

সার্জারির আগে জানা জরুরি

  • সার্জন নির্বাচন: একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ সার্জন নির্বাচন করা খুবই জরুরি।
  • রিস্ক সম্পর্কে জানা: সার্জারির সঙ্গে কিছু ঝুঁকি জড়িত। রক্তপাত, সংক্রমণ, অ্যানেস্থেসিয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি হতে পারে।
  • রিয়ালিস্টিক আশা: সার্জারির মাধ্যমে আপনি পুরোপুরি আলাদা একজন মানুষে পরিণত হবেন না।
  • মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি: সার্জারির আগে মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি।

সার্জারির পরের যত্ন

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
  • সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবুন

সার্জারি একটি বড় সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবুন। আপনার চেহারার কোন অংশ নিয়ে আপনি অসন্তুষ্ট, কেন এই সার্জারি করতে চান, সার্জারির পর আপনি কী আশা করছেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভালো করে চিন্তা করুন।

সমাপ্তি

সার্জারির মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা এবং তরুণতার ছাপ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবুন এবং একজন অভিজ্ঞ সার্জনের পরামর্শ নিন।

 

হৃদপিণ্ডের বেধে যাওয়া ধমনী (এথেরোস্ক্লেরোসিস): নিজেকে রক্ষা করার উপায়

এথেরোস্ক্লেরোসিস হল একটি সাধারণ অবস্থা যেখানে ধমনীতে ফ্যাটি পদার্থ জমে যায় এবং ধমনী সংকীর্ণ হয়ে যায়। এই সংকীর্ণ ধমনী হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কেন হয় এথেরোস্ক্লেরোসিস?

এথেরোস্ক্লেরোসিসের অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ধমনীতে প্লেক জমতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ ধমনীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্লেক জমার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
  • ধূমপান: ধূমপান ধমনীকে সংকীর্ণ করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • পরিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে কারও এথেরোস্ক্লেরোসিস থাকে, তাহলে আপনারও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
  • অন্যান্য কারণ: মোটা হওয়া, শারীরিকভাবে অসক্রিয় থাকা এবং কিছু ধরনের প্রদাহজনক অবস্থাও এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এথেরোস্ক্লেরোসিসের লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে এথেরোস্ক্লেরোসিসের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে যখন ধমনী অনেক বেশি সংকীর্ণ হয়ে যায়, তখন নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  • বুকে ব্যথা: শারীরিক কাজ করার সময় বা চাপের সময় বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট: শারীরিক কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • পায়ে ব্যথা: হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হওয়া এবং বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে যাওয়া।
  • মাথা ঘোরা: রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণে মাথা ঘোরা।

এথেরোস্ক্লেরোসিস থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়

  • সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: ফল, সবজি, পুরো শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মধ্যম তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ওষুধ সেবন করুন (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন: যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।
  • মানসিক চাপ কমান: যোগ, ধ্যান বা অন্য কোনো শিথিলকরণ কৌশল অবলম্বন করুন।

উপসংহার

এথেরোস্ক্লেরোসিস একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, সুস্থ জীবনযাপন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আপনি উপরোক্ত কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।