গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মহিলা গর্ভাবস্থার সময় প্রথমবারের মতো উচ্চ রক্তশর্করা (গ্লুকোজ) মাত্রার সম্মুখীন হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।

কেন হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস?

গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিবর্তনের ফলে রক্তে শর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে।

কারা ঝুঁকিতে থাকে?

  • আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকলে: যাদের আগে থেকেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়।
  • পরিবারে ডায়াবেটিস থাকলে: যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • বেশি ওজন হলে: অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • আগের গর্ভাবস্থায় বড় বাচ্চা হলে: আগের গর্ভাবস্থায় যাদের বড় বাচ্চা হয়েছিল, তাদের আবার গর্ভবতী হলে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপ, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) থাকলে: এই সব রোগ থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ

অনেক ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • প্রায়শই প্রস্রাব করা
  • অস্পষ্ট দৃষ্টি
  • ধীরে জখম সারা
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা
  • অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জটিলতা

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে তা মাতা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন:

  • মাতার জন্য: উচ্চ রক্তচাপ, প্রসবকালীন জটিলতা, প্রসবের পর ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি।
  • শিশুর জন্য: বড় আকারের শিশু জন্ম, জন্মের সময় সমস্যা, এমনকি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকতে পারে, জন্মের পর রক্তে শর্করা কমে যাওয়া, ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি।

চিকিৎসা

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শর্করাযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
  • ব্যায়াম: নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার ইত্যাদি ব্যায়াম করা।
  • রক্তের শর্করা পরীক্ষা: নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা।
  • ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ দিতে হয়।

প্রতিরোধ

গর্ভাবস্থার আগে থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন:

  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করা

মনে রাখবেন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস একটি গুরুতর সমস্যা। তাই যদি আপনি গর্ভবতী হন, তাহলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করান।

 

শিশুদের দাঁতের যত্ন: সুন্দর হাসি, সুস্থ জীবন

শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়া কেবল দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাঁতের যত্নের অভ্যাস শৈশবকাল থেকে গড়ে তোলা হলে জীবনভর সুস্থ দাঁত ধরে রাখা সম্ভব হয়।

কেন শিশুদের দাঁতের যত্ন গুরুত্বপূর্ণ:

  • ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ: দাঁতের যত্ন না নিলে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁত ক্ষয় হতে পারে।
  • মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধ: দাঁতের প্লাক জমলে মাড়ির প্রদাহ হতে পারে।
  • সঠিক দাঁতের বৃদ্ধি: দুধদাঁত সঠিকভাবে পড়ে গেলে স্থায়ী দাঁত সঠিকভাবে গজাতে সাহায্য করে।
  • উচ্চারণের উন্নতি: সুস্থ দাঁত স্পষ্ট উচ্চারণে সাহায্য করে।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: সুন্দর হাসি শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

শিশুদের দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধের উপায়:

  • জন্মের পর থেকে শুরু: শিশুর জন্মের পর থেকেই পরিষ্কার গজ কাপড় দিয়ে মাড়ি মাসাজ করে দিতে হবে।
  • দাঁত ওঠার পর থেকে: দাঁত ওঠার পর থেকেই ফ্লোরাইডযুক্ত নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে দিতে হবে।
  • দুধের বোতল: শিশুকে শুয়ে শুয়ে দুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
  • মিষ্টি খাবার: মিষ্টি খাবার, চকলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
  • নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা: প্রতি ছয় মাসে একবার শিশুকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
  • সুষম খাদ্য: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  • ফ্লোরাইড: ফ্লোরাইড দাঁতের এনামেলকে শক্ত করে ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শিশুদের দাঁতের সমস্যার লক্ষণ:

  • দাঁতে ব্যথা
  • মাড়িতে ফোস্কা
  • দাঁতে কালো দাগ
  • দাঁত নড়া
  • মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসা

শিশুদের দাঁতের সমস্যা হলে কী করবেন:

  • অবিলম্বে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • ডাক্তারের নির্দেশ মতো ওষুধ সেবন করুন।
  • নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন।

উপসংহার:

শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। শৈশবকাল থেকেই শিশুদের দাঁতের যত্নের অভ্যাস গড়ে তোলা হলে তারা জীবনভর সুস্থ দাঁত ধরে রাখতে পারবে। তাই আজই শুরু করুন আপনার সন্তানের দাঁতের যত্ন নিতে।

মনে রাখবেন: সুন্দর হাসি একটি সুস্থ জীবনের প্রতীক।

 

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট: দাঁত বাঁচানোর একটি উপায়

দাঁতের মূলের চিকিৎসা বা রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট হলো একটি দাঁতের চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে গভীরভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত বা সংক্রমিত দাঁতকে বাঁচানো সম্ভব হয়। এই চিকিৎসায় দাঁতের ভেতরের নরম অংশ, যাকে পাল্প বলা হয়, তা পরিষ্কার করে ফেলা হয় এবং সেখানে একটি বায়োকম্প্যাটিবল উপাদান দিয়ে ভরে দেওয়া হয়।

কেন রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন?

  • দাঁতের ক্ষয়: যখন দাঁতের ক্ষয় খুব গভীরে চলে যায় এবং দাঁতের মজ্জায় পৌঁছে যায়, তখন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হয়।
  • আঘাত: দাঁতে কোনো ধরনের আঘাত লাগলে দাঁতের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • পূর্ববর্তী দাঁতের চিকিৎসা: পূর্ববর্তী ফিলিং বা ক্রাউন করা দাঁতে ফাটল ধরলে বা ক্ষয় হলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
  • মাড়ির রোগ: মাড়ির রোগের কারণে দাঁতের গোড়ায় সংক্রমণ হলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের প্রক্রিয়া

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট সাধারণত একাধিক ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. অনুমতি: দাঁতের ডাক্তার প্রথমে একটি লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে দাঁতকে জাড়িয়ে দেবেন।
  2. ক্ষয় অপসারণ: ক্ষয়গ্রস্ত অংশটি পরিষ্কার করে ফেলা হয়।
  3. পাল্প অপসারণ: দাঁতের মজ্জাকে একটি বিশেষ সরঞ্জাম দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা হয়।
  4. রুট ক্যানেল পরিষ্কার: রুট ক্যানালকে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
  5. রুট ক্যানাল ভরাট: পরিষ্কার হয়ে যাওয়া রুট ক্যানালকে একটি বায়োকম্প্যাটিবল উপাদান দিয়ে ভরে দেওয়া হয়।
  6. ক্রাউন: অনেক ক্ষেত্রে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের পর দাঁতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একটি ক্রাউন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের পরে

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের পরে কিছু দিন ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। তবে সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে এই সমস্যা দূর করা যায়। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের পরে নিয়মিতভাবে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের সুবিধা

  • দাঁত বাঁচানো: রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ক্ষয়গ্রস্ত দাঁতকে বাঁচানো সম্ভব।
  • ব্যথা উপশম: সংক্রমিত দাঁতের কারণে যে ব্যথা হয়, তা রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে দূর করা যায়।
  • স্বাভাবিক চেহারা: রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের পরে দাঁতের স্বাভাবিক চেহারা বজায় থাকে।

উপসংহার:

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট একটি সাধারণ এবং সফল দাঁতের চিকিৎসা পদ্ধতি। যদি আপনার দাঁতে গভীর ক্ষয় বা সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আপনার দাঁত বাঁচানো সম্ভব। তাই দেরি না করে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা: বিস্তারিত জানুন

মুখের ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ যা মুখের বিভিন্ন অংশে, যেমন ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালের ভেতরের আবরণ, তালু, লালা গ্রন্থি ও টনসিলে হতে পারে। যদিও এই রোগ ভয়ঙ্কর, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি নিরাময় করা সম্ভব। মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার পদ্ধতি রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন, আকার, অবস্থান এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে।

মুখের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়:

  • সার্জারি: মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসায় সার্জারি একটি সাধারণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সারগ্রস্ত টিস্যু এবং তার আশেপাশের কিছু স্বাস্থ্যকর টিস্যু অপসারণ করা হয়। সার্জারির পরে, ক্ষত সারাতে এবং মুখের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে পুনর্গঠন সার্জারি করা হতে পারে।
  • রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপিতে উচ্চ-শক্তির এক্স-রে বা অন্যান্য ধরণের রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সার্জারির আগে, পরে বা একা ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপিতে শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। এই ওষুধগুলি সাধারণত শিরায় ইনজেকশন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
  • টার্গেটেড থেরাপি: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অংশকে লক্ষ্য করে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি স্বাভাবিক কোষগুলোকে ক্ষতি না করে কেবল ক্যান্সার কোষগুলোকেই ধ্বংস করে।
  • ইমিউনোথেরাপি: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করা হয়।

চিকিৎসার পরে যত্ন

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার পরে রোগীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে:

  • মুখের যত্ন: চিকিৎসার পরে মুখের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত পরিষ্কার করা, গার্গল করা এবং মুখে আঁচিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • পুষ্টি: চিকিৎসার কারণে রোগীর খাওয়া-দাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  • নিয়মিত পরীক্ষা: চিকিৎসার পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং পরীক্ষা করানো জরুরি।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনার মুখে কোনো ধরনের ঘা, ফোস্কা, সাদা দাগ বা লাল দাগ দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়াও, যদি আপনার মুখে ব্যথা, ফোলা, বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়, তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সারসংক্ষেপ

মুখের ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ হলেও, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি নিরাময় করা সম্ভব। মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন, আকার, অবস্থান এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। তাই, যদি আপনার মুখে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

চোয়ালের ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা: বিস্তারিত জানুন

চোয়ালের ভাঙা হাড় একটি সাধারণ আঘাত, যা সাধারণত দুর্ঘটনা, আঘাত বা লাগামের কারণে হয়। এই আঘাতটি কেবল ব্যথা ও অস্বস্তিই সৃষ্টি করে না, বরং খাওয়া, পান করা এবং কথা বলায়ও সমস্যা তৈরি করে। ভাগ্যক্রমে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে চোয়ালের ভাঙা হাড় সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।

চোয়ালের ভাঙা হাড়ের চিকিৎসার পদ্ধতি

চোয়ালের ভাঙা হাড়ের চিকিৎসার পদ্ধতি ভাঙার তীব্রতা, অবস্থান এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, চিকিৎসকরা নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করেন:

  • কনজারভেটিভ চিকিৎসা: এই পদ্ধতিতে সাধারণত ভাঙা হাড়কে সঠিক অবস্থানে রেখে একটি পটি বা স্প্লিন্ট দিয়ে বাঁধা হয়। এটি হাড়কে স্বাভাবিকভাবে জোড়া লাগাতে সাহায্য করে।
  • ক্লোজ রিডাকশন: এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক হাত দিয়ে ভাঙা হাড়গুলোকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনে এবং তারপর একটি স্প্লিন্ট দিয়ে বাঁধে।
  • ওপেন রিডাকশন ইন্টারনাল ফিক্সেশন: এই পদ্ধতিতে সার্জারির মাধ্যমে ভাঙা হাড়গুলোকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয় এবং প্লেট, স্ক্রু বা তারের সাহায্যে সেগুলোকে একসাথে জোড়া লাগানো হয়।
  • হাড়ের গ্রাফটিং: কিছু ক্ষেত্রে, যখন হাড়ের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন হাড়ের গ্রাফটিং প্রয়োজন হতে পারে। এই পদ্ধতিতে রোগীর নিজের শরীর থেকে বা একটি দাতা থেকে নেওয়া হাড়ের টুকরো ভাঙা হাড়ের জায়গায় স্থাপন করা হয়।

চিকিৎসার পরে যত্ন

চিকিৎসার পরে, রোগীকে চিকিৎসকের নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  • মুখের যত্ন নেওয়া
  • নরম খাবার খাওয়া
  • ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো
  • শারীরিক পরিশ্রম এড়ানো

চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?

চোয়ালের ভাঙা হাড়কে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

  • দাঁত হারানো
  • খাওয়া, পান করা এবং কথা বলার সমস্যা
  • চোয়ালের বিকৃতি
  • সংক্রমণ

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনার চোয়ালে আঘাত লাগে এবং আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

  • তীব্র ব্যথা
  • ফুলে যাওয়া
  • রক্তপাত
  • চোয়ালের বিকৃতি
  • খাওয়া, পান করা এবং কথা বলার সমস্যা

সারসংক্ষেপ

চোয়ালের ভাঙা হাড় একটি সাধারণ আঘাত, যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সফলভাবে নিরাময় করা যায়। চিকিৎসার পদ্ধতি ভাঙার তীব্রতা এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং পরবর্তী যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

দাঁতের ইমপ্লান্ট: একটি স্থায়ী সমাধান

দাঁত হারিয়ে ফেলা একটি সাধারণ সমস্যা, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও চেহারা দুটোকেই প্রভাবিত করে। কিন্তু আজকের আধুনিক দন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে, হারিয়ে যাওয়া দাঁতকে পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি খুবই কার্যকরী এবং স্থায়ী সমাধান রয়েছে, যাকে বলা হয় দাঁতের ইমপ্লান্ট।

দাঁতের ইমপ্লান্ট কী?

দাঁতের ইমপ্লান্ট হল একটি ছোট টাইটানিয়াম স্ক্রু যা চোয়ালের হাড়ের মধ্যে স্থাপন করা হয়। এই ইমপ্লান্টটি হারিয়ে যাওয়া দাঁতের শিকড়ের মতো কাজ করে এবং এর উপর একটি কৃত্রিম দাঁত (ক্রাউন) বসানো হয়। এই পদ্ধতিটি হারিয়ে যাওয়া দাঁতকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করে এবং একটি স্বাভাবিক দাঁতের মতোই দেখতে এবং কাজ করে।

কেন দাঁতের ইমপ্লান্ট জনপ্রিয়?

  • স্থায়িত্ব: দাঁতের ইমপ্লান্ট খুবই স্থায়ী। যথাযত যত্ন নিলে এটি একটি জীবনকাল স্থায়ী হতে পারে।
  • দৃঢ়তা: ইমপ্লান্ট চোয়ালের হাড়ের সাথে মিশে যায়, ফলে এটি খাওয়া, কথা বলা এবং হাসির সময় একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করে।
  • স্বাভাবিক চেহারা: ইমপ্লান্ট এবং ক্রাউন একসঙ্গে একটি স্বাভাবিক দাঁতের মতোই দেখতে হয়।
  • আরামদায়ক: ইমপ্লান্ট খুবই আরামদায়ক এবং এটি দৈনন্দিন কাজে কোনো বাধা দেয় না।
  • পাশের দাঁতের ক্ষতি হয় না: ব্রিজের মতো পাশের দাঁতকে কাটার প্রয়োজন হয় না।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: একটি সুন্দর হাসি আপনার আত্মবিশ্বাসকে অনেক বৃদ্ধি করতে পারে।

দাঁতের ইমপ্লান্টের প্রক্রিয়া

দাঁতের ইমপ্লান্টের প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. পরীক্ষা: ডেন্টিস্ট আপনার মুখের একটি বিস্তারিত পরীক্ষা করবেন এবং আপনার জন্য ইমপ্লান্ট উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করবেন।
  2. ইমপ্লান্ট স্থাপন: স্থানীয় অবেদন করার পর, ডেন্টিস্ট চোয়ালের হাড়ে ইমপ্লান্ট স্থাপন করবেন।
  3. হাড়ের সাথে মিশ্রণ: ইমপ্লান্টকে হাড়ের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য কিছু সময় দেওয়া হয়।
  4. ক্রাউন স্থাপন: হাড়ের সাথে ইমপ্লান্ট মিশে যাওয়ার পর, এর উপর একটি কৃত্রিম দাঁত (ক্রাউন) বসানো হয়।

কারা দাঁতের ইম্প্লান্ট করাতে পারেন?

যাদের দাঁত হারিয়ে গেছে বা দাঁতের সমস্যা রয়েছে, তারা দাঁতের ইমপ্লান্ট করাতে পারেন। তবে কিছু শারীরিক অবস্থা, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি, ইমপ্লান্টের জন্য উপযুক্ত না হতে পারে। তাই ইমপ্লান্ট করার আগে ডেন্টিস্টের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি।

উপসংহার:

দাঁতের ইমপ্লান্ট হল একটি স্থায়ী এবং কার্যকরী সমাধান যা হারিয়ে যাওয়া দাঁতকে পুনরুদ্ধার করতে পারে। যদি আপনার দাঁত হারিয়ে গেছে এবং আপনি একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর হাসি চান, তাহলে দাঁতের ইমপ্লান্ট আপনার জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

 

দাঁতের ইমপ্লান্ট: সফলতা ও ব্যর্থতার কারণ

দাঁত হারানো একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে দাঁতের ইমপ্লান্ট একটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি। ইমপ্লান্ট হলো একটি কৃত্রিম দাঁতের শিকড় যা চোয়ালের হাড়ে স্থাপন করা হয়। এর উপরে একটি কৃত্রিম দাঁত বসানো হয় যা দেখতে এবং কাজ করতে প্রাকৃতিক দাঁতের মতোই হয়। তবে, সকল ইমপ্লান্টই সফল হয় না। ইমপ্লান্টের সফলতা এবং ব্যর্থতার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

ইমপ্লান্ট সফল হওয়ার কারণ

  • দক্ষ চিকিৎসক: একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ দন্ত চিকিৎসক ইমপ্লান্ট সফল করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ইমপ্লান্টের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে পারেন এবং সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।
  • সুস্থ হাড়: ইমপ্লান্ট সফল হওয়ার জন্য চোয়ালের হাড়ের যথেষ্ট ঘনত্ব থাকা জরুরি। যদি হাড় পাতলা বা দুর্বল হয়, তাহলে ইমপ্লান্ট স্থাপন করা কঠিন হতে পারে।
  • রোগীর স্বাস্থ্য: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্যান্য রোগ যাদের আছে, তাদের জন্য ইমপ্লান্টের সফলতা অন্যান্যের তুলনায় কম হতে পারে।
  • রোগীর যত্ন: ইমপ্লান্টের পরে রোগীর যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া ইত্যাদি সফলতার জন্য জরুরি।

ইমপ্লান্ট ব্যর্থ হওয়ার কারণ

  • সংক্রমণ: ইমপ্লান্টের চারপাশে সংক্রমণ হলে ইমপ্লান্ট ব্যর্থ হতে পারে।
  • হাড়ের ক্ষয়: ইমপ্লান্টের সাথে হাড়ের যোগসূত্র না হওয়া বা হাড়ের ক্ষয় হলে ইমপ্লান্ট ঢিলে হয়ে যেতে পারে।
  • পর্যাপ্ত হাড় না থাকা: যদি চোয়ালের হাড়ের যথেষ্ট ঘনত্ব না থাকে, তাহলে ইমপ্লান্ট স্থাপন করা কঠিন হতে পারে এবং এটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • রোগীর ধূমপান: ধূমপান হাড়ের নিরাময়কে বাধা দেয় এবং ইমপ্লান্ট ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • দাঁত কড়াকড়ি করে ব্রাশ করা: ইমপ্লান্টের চারপাশে মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং ইমপ্লান্ট ব্যর্থ হতে পারে।

ইমপ্লান্টের সফলতা বাড়ানোর উপায়

  • দক্ষ চিকিৎসকের কাছে যান: একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • সুস্থ জীবনযাপন করুন: ধূমপান, মদ্যপান এড়িয়ে সুস্থ খাবার খান।
  • দাঁতের যত্ন নিন: দাঁত নিয়মিত ব্রাশ করুন, ফ্লস করুন এবং ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী মুখের যত্ন নিন।
  • নিয়মিত পরীক্ষা করান: ইমপ্লান্টের পরে নিয়মিত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।

সারসংক্ষেপ

দাঁতের ইমপ্লান্ট হলো দাঁত হারানোর একটি দারুণ সমাধান। তবে, সফলতার জন্য রোগীর স্বাস্থ্য, চিকিৎসকের দক্ষতা এবং রোগীর যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমপ্লান্টের সফলতা বাড়ানোর জন্য উপরোক্ত পরামর্শগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে।

 

মুখের ক্যান্সার: প্রাথমিক লক্ষণ এবং প্রতিরোধ

মুখের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ যা মুখের ভিতরে বা ঠোঁটে শুরু হতে পারে। যদিও এই রোগটি ভয়ঙ্কর, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটি সুচিকিৎসাযোগ্য। তাই মুখের ক্যান্সারের লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

মুখের ক্যান্সারের লক্ষণগুলি প্রায়ই অবহেলিত হয়ে যায় কারণ এগুলি অন্য সাধারণ মুখের সমস্যার মতোই মনে হতে পারে। তবে, যদি নিম্নলিখিত কোনো লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • মুখে ব্যথা বা জ্বালা: মুখে কোনো জায়গায় ব্যথা বা জ্বালা অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে জিহ্বা, গাল বা ঠোঁটে।
  • মুখে ঘা: মুখে কোনো ঘা হতে পারে যা দীর্ঘদিন ধরে সেরে উঠছে না।
  • মুখে সাদা বা লাল দাগ: মুখের ভিতরে সাদা বা লাল রঙের কোনো দাগ দেখা দিতে পারে।
  • চিবানো, গিলতে বা কথা বলতে সমস্যা: খাবার চিবানো, গিলতে বা কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে।
  • মুখে ফোলা: মুখ বা গলায় ফোলা অনুভূতি হতে পারে।
  • কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন: কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যেতে পারে বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।
  • মুখে রক্তপাত: মুখ থেকে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে দাঁত ব্রাশ করার সময় বা খাবার চিবানোর সময়।
  • দাঁত ঢিলে হয়ে যাওয়া: দাঁত ঢিলে হয়ে যাওয়া বা মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে।
  • কানে ব্যথা: কানে ব্যথা হতে পারে।
  • গলার গ্রন্থি ফুলে যাওয়া: গলার গ্রন্থি ফুলে যাওয়া লক্ষ্য করা যেতে পারে।

মুখের ক্যান্সারের কারণ

মুখের ক্যান্সারের অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল:

  • ধূমপান এবং তামাক সেবন: ধূমপান এবং তামাক সেবন মুখের ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV): এই ভাইরাস মুখের ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
  • সূর্যের অতিরিক্ত তাপ: সূর্যের অতিরিক্ত তাপ ঠোঁটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ

মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • ধূমপান এবং তামাক সেবন বন্ধ করা: ধূমপান এবং তামাক সেবন মুখের ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ। তাই এগুলি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
  • মদ্যপান পরিমিত করা: অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলা উচিত।
  • সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা: সূর্যের তাপ থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করা: ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
  • নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়া: দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লস করা উচিত।
  • নিয়মিত চেকআপ: নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার মুখে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

জন্মগত মুখের বিকৃতির চিকিৎসা: বিস্তারিত জানুন

জন্মগত মুখের বিকৃতি শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। এটি শিশুর জন্মের সময়ই দেখা দিতে পারে এবং শিশুর চেহারা এবং কার্যকারিতা উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। যদিও এই সমস্যাটি দেখতে ভয়ানক লাগতে পারে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।

জন্মগত মুখের বিকৃতির কারণ

জন্মগত মুখের বিকৃতির অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • জিনগত কারণ: কিছু জন্মগত মুখের বিকৃতি জিনগত কারণে হয়।
  • ভ্রূণের বিকাশের সময়ের সমস্যা: ভ্রূণের বিকাশের সময় কোনো সমস্যা হলেও মুখের বিকৃতি হতে পারে।
  • মায়ের গর্ভকালীন সময়ের জটিলতা: মায়ের গর্ভকালীন সময়ের কিছু জটিলতা যেমন, ডায়াবেটিস, সংক্রমণ ইত্যাদি মুখের বিকৃতির কারণ হতে পারে।
  • অজানা কারণ: অনেক ক্ষেত্রে জন্মগত মুখের বিকৃতির কোনো স্পষ্ট কারণ পাওয়া যায় না।

জন্মগত মুখের বিকৃতির ধরন

জন্মগত মুখের বিকৃতির বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ক্লফট প্যালাট: এই ধরনের বিকৃতিতে তালুতে একটি ফাঁক থাকে।
  • ক্লফট লিপ: এই ধরনের বিকৃতিতে ওঠার উপর একটি ফাঁক থাকে।
  • ক্লফট লিপ এবং প্যালাট: এই ধরনের বিকৃতিতে ওঠার উপর এবং তালুতে একটি ফাঁক থাকে।
  • মাইক্রোগনাথিয়া: এই ধরনের বিকৃতিতে চিবুক খুব ছোট হয়।

জন্মগত মুখের বিকৃতির চিকিৎসা

জন্মগত মুখের বিকৃতির চিকিৎসা শিশুর বয়স, বিকৃতির ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, জন্মের পরপরই চিকিৎসা শুরু করা হয়। চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ যেমন, মুখ ও দাঁতের চিকিৎসক, প্লাস্টিক সার্জন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি দলবদ্ধভাবে কাজ করেন।

চিকিৎসার পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • সার্জারি: সার্জারি হল জন্মগত মুখের বিকৃতির চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি। সার্জারির মাধ্যমে ফাঁক বন্ধ করা হয় এবং মুখের আকৃতি স্বাভাবিক করা হয়।
  • অর্থোডন্টিক চিকিৎসা: দাঁতের বন্ধনী বা অন্য ধরনের অর্থোডন্টিক চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের অবস্থান সঠিক করা হয়।
  • স্পিচ থেরাপি: ভাষা এবং বক্তৃতা সমস্যা দূর করার জন্য স্পিচ থেরাপি করা হয়।
  • শ্রবণ পরীক্ষা: ক্লফট প্যালাটের কারণে শ্রবণ সমস্যা হতে পারে। তাই শ্রবণ পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে শ্রবণ সাহায্য ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসার পরে যত্ন

চিকিৎসার পরে শিশুকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী খাবার খাওয়া, দাঁত পরিষ্কার করা এবং অন্যান্য যত্ন নেওয়া উচিত।

সারসংক্ষেপ

জন্মগত মুখের বিকৃতি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এটি সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। শিশু যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করবে, তত তার পূর্ণ সুস্থতা আসার সম্ভাবনা বেশি।

 

শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে নিজের মানসিক সুস্থতার দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেনতো!

সুস্থতা বলতে শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক সুস্থতাকেও বোঝায়। তাই সুস্থতার জন্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু শারীরিক সুস্থতাকে আমরা যতটা গুরুত্ব দেই মানসিক সুস্থতাকে আমরা ততটা গুরুত্ব দেই না। সময় মত যদি মানসিক চিকিৎসা করা হয় তাহলে মানসিক সমস্যাগুলো এত বড় হয় না। যেমন : একজন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এ ভুগছেন, তিনি যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না নেন তাহলে তা কয়েক বছর পর ওসিডি তে রূপ নিতে পারে এবং এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ানক মানসিক সমস্যায় পড়তে পারেন। প্রথম দিকে তিনি যদি একজন কাউন্সিলারের সাহায্য নিতেন তাহলে হয়তো তার কোন ওষধই লাগতো না শুধু কাউন্সিলিংই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কাউন্সিলর এর কাছে না গিয়ে ভেতরে মানসিক রোগ পুষে রাখায় তার সমস্যা আরো জটিল হয়ে গেল এবং পরবর্তীতে তার সেরে উঠতে অনেক ওষুধ এবং জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।

তাই শারীরিক অসুস্থতায় যেমন আমরা ডাক্তারের সাহায্য নেই তেমনি মানসিক অসুস্থতায়ও আমাদের উচিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
আজকাল আমরা অনেকেই মানসিক রোগের চিকিৎসায় কাউন্সিলিং শব্দটা শুনে থাকি। কাউন্সিলিং সম্পর্কে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা থাকে। তাহলে আমরা প্রথমে জেনে নেই কাউন্সিলিং কি?

#কাউন্সিলিং কি?
কাউন্সিলিং হল কাউন্সিলর ও কাউন্সিলিং সেবা গ্রহীতার (client) মধ্যকার একটি পেশাদারী সম্পর্ক। এখানে ক্লায়েন্টের চিন্তা, আবেগ সম্বন্ধীয়, ও আচরণগত যেসব সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। এখানে কাউন্সিলর তার সেবা গ্রহীতাকে এমনভাবে সহায়তা করেন যাতে সেবা গ্রহীতা তার মনোসামাজিক কর্মক্ষমতার সর্বোপরি কাম্য অবস্থায় যেতে পারেন এবং সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারেন।
কাউন্সিলিং সেবায় সেবা গ্রহীতা নিজের মনোভাব, চিন্তা, অনুভূতি, গোপনীয়তার সাথে কাউন্সিলর এর কাছে প্রকাশ করতে পারেন। এবং যেহেতু কাউন্সিলর নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে তার কথা শুনেন সেহেতু সেবা গ্রহীতাও নির্দ্বিধায় তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন।

#কখন কাউন্সেলিং সেবা নিব?
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে কখন আমরা কাউন্সেলিং সেবা নিব বা কারা কাউন্সেলিং সেবা নিবে?
আসলে আমরা যে কেউই জীবনের যে কোন মুহূর্তে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারি। এর জন্য যে মানসিক ভাবে প্রচন্ড অসুস্থ হতে হবে এমনটি নয়। নিজেদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্যও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেউ যদি মনে করে জীবনে কিছু দক্ষতা অর্জন করবে, যেমন: নন ভায়োলেন্ট কমিউনিকেশন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, নিজের সম্পর্কের উন্নতি, মানসিক চাপ সঠিকভাবে মোকাবেলা করার দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সঠিক প্যারেন্টিং স্টাইল- সেক্ষেত্রেও কাউন্সিলর এ সকল দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারেন।
সুতরাং কারো যদি কোন চিন্তা, আবেগ সম্বন্ধীয়, অথবা আচরণগত কোন সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে তার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ে অথবা জীবনে কোন মানসিক দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন।

#কাউন্সিলিং কেন প্রয়োজন?
জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া সম্ভব। সাধারণত যে সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায় তা নিচে তুলে ধরা হলো –

  • চিন্তা সম্বন্ধীয় সমস্যা
    অনেক সময় অনেকের চিন্তার ধরন অনেক বেশি নেতিবাচক হয়। বিশেষ করে ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে। যেমন আপনি কাউকে ফোন দিলেন সে কোন কারণে ফোন ধরতে পারল না। যে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে আছে সে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে মনে মনে ধরে নিতে পারে তার ফোন উপেক্ষা করল। সে তখন অন্যান্য সম্ভাবনা গুলো দেখতে চাই না। যেমন এমনও তো হতে পারে যে, যাকে ফোন দেওয়া হল সে হয়তো তখন ব্যস্ত ছিল অথবা তার ফোন সাইলেন্ট ছিল। যাদের চিন্তা নেতিবাচক তারা ঘটনার ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলো দেখতে চাই না। কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা গুলো পরিবর্তন করা সম্ভব।
  • আবেগ সম্বন্ধীয় সমস্যা :
    অনেক সময় অনেকে নিজের আবেগ সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে না। অন্যের আবেগের সাথে সাথে নিজের আবেগও ঠিক মতন বুঝতে পারে না। কেউ কেউ হয়তো অল্পতে রেগে যায় আবার কেউ কেউ হয়তো অনেক দুঃখেও নিজের কষ্টগুলোকে আটকে রাখে। এ সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং সেবা তার নিজের আবেগ বুঝতে ও প্রকাশ করতে এবং অন্যের আবেগ বুঝতে ও অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারে।
  •  আচরণগত সমস্যা :
    কারো যদি আচরণগত সমস্যা থাকে, যেমন: নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি উদ্বেগ অনুভব করা, অতিরিক্ত ভয়, রাগের কারনে হঠাৎ বিস্ফোরণ, ময়লার ভয়ে বারবার হাত ধোয়া, ইত্যাদি তাহলে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন।
  • মানসিক চাপ :আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কমবেশি মানসিক চাপ থাকে। সাধারণত এ সকল মানসিক চাপগুলো আমরা নিজেরাই সামলে উঠতে পারি। আবার অনেক সময় সামলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পরি। এ সকল মানসিক চাপ কিভাবে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে হয় সেই দক্ষতা যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে জীবনধারণ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হলে :
    অনেক সময় দেখা যায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এ সকল ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা হয়।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ক্ষেত্রেই কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায়। যেমন: সন্তান লালন পালনে সঠিক পদ্ধতি, মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসা, ঘুমের সমস্যা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, হীনমন্যতা দূর, নিজের সম্পর্ক গুলোর উন্নতি ইত্যাদি।