EEG: মস্তিষ্কের কার্যকলাপ মাপার একটি সহজ উপায়

EEG অর্থাৎ Electroencephalogram হল মস্তিষ্কের বিদ্যুৎচৌম্বকীয় কার্যকলাপ মাপার একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। মস্তিষ্কের কোটি কোটি নিউরন বা স্নায়ু কোষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করার সময় বিদ্যুৎ সিগন্যাল তৈরি করে। EEG এই সিগন্যালগুলোকে রেকর্ড করে একটি গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরে। এই গ্রাফ থেকে চিকিৎসকরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন।

EEG কেন করা হয়?

  • মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয়: মৃগি, মস্তিষ্কের টিউমার, মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের কারণে মস্তিষ্কের কার্যকলাপে পরিবর্তন হয়। EEG এই পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • চেতনা হারানোর কারণ নির্ণয়: যখন কেউ হঠাৎ চেতনা হারায়, তখন EEG করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা হয়।
  • মস্তিষ্কের মৃত্যু নির্ণয়: মস্তিষ্ক মৃত্যুর ক্ষেত্রে EEG একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
  • নিদ্রার সমস্যা নির্ণয়: নিদ্রাহীনতা, নার্কোলেপ্সি ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে EEG করা হয়।
  • মস্তিষ্কের শিরা বা ধমনীর অস্বাভাবিকতা নির্ণয়: মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা থাকলে EEG-এ তা দেখা যেতে পারে।

EEG করার পদ্ধতি

EEG করার জন্য রোগীর মাথায় বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রোড লাগানো হয়। এই ইলেক্ট্রোডগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ থেকে বিদ্যুৎ সিগন্যাল গ্রহণ করে। রোগীকে একটি শান্ত ও অন্ধকার কামরে শুয়ে থাকতে হয়। পরীক্ষার সময় রোগীকে চোখ বন্ধ করে থাকতে বলা হয়। পরীক্ষাটি সাধারণত 20-30 মিনিট সময় নেয়।

EEG-এর ফলাফল

EEG-এর ফলাফল একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানো হয়। এই গ্রাফে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের বিদ্যুৎ সিগন্যালের তরঙ্গ দেখা যায়। চিকিৎসকরা এই তরঙ্গের আকার, আয়তন এবং ফ্রিকোয়েন্সি পরীক্ষা করে মস্তিষ্কের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পান।

EEG করার আগে

  • পরীক্ষার আগে চিকিৎসকের নির্দেশাবলী ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে।
  • পরীক্ষার আগে মাথা ধোয়া এবং কোনো ধরনের তেল বা জেল ব্যবহার না করা উচিত।
  • পরীক্ষার আগে কফি, চা বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
  • পরীক্ষার আগে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

EEG-এর সুবিধা

  • EEG একটি অতিরিক্ত নিরাপদ এবং ব্যথাহীন পরীক্ষা।
  • EEG-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ সহজে নির্ণয় করা যায়।
  • EEG-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিবর্তন সময়ের সাথে সাথে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

মনে রাখবেন: EEG একটি চিকিৎসা পরীক্ষা। তাই, এই পরীক্ষা করানোর আগে একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরী।