কিডনি রোগ: কারণ ও প্রতিরোধ

কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্তকে পরিশোধন করে, অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফলে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে।

কিডনি রোগের কারণগুলি

কিডনি রোগের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ডায়াবেটিস: উচ্চ রক্তশর্করা কিডনির রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ধীরে ধীরে কিডনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
  • উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির ফিল্টারেশন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।
  • কিডনির সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
  • কিডনির পাথর: কিডনিতে খনিজ পদার্থ জমে পাথর তৈরি হলে মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি করে এবং কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • পলিসিস্টিক কিডনি রোগ: জন্মগত একটি রোগ যেখানে কিডনিতে অনেকগুলি ছোট ছোট পানির পুটলি তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে কিডনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
  • অটোইমিউন রোগ: শরীরের নিজস্ব কোষকে আক্রমণ করে এমন রোগগুলি, যেমন লুপাস, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, ইত্যাদি।
  • কিছু ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন পেইনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি, দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • কিডনির আঘাত: কিডনিতে আঘাত লাগলে বা কিডনিতে রক্তক্ষরণ হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কিডনি রোগের লক্ষণগুলি

প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যখন রোগটি এগিয়ে যায়, তখন নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • প্রস্রাবের পরিমাণ বাড় বা কম হওয়া
  • প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেওয়া
  • প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া
  • পা ফুলে যাওয়া
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়া
  • ক্লান্তি অনুভব করা
  • বমি বমি ভাব
  • খিদের অভাব
  • চুল পড়া
  • ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

কিডনি রোগ প্রতিরোধে কী করবেন?

  • রক্তচাপ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস কিডনি রোগের প্রধান কারণ।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান: ফল, সবজি, পুরো শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত দুধ খান। নোনতা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন: দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
  • ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপান কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং কিডনি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
  • নিয়মিত চেকআপ করান: যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে নিয়মিত চেকআপ করান।

কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি রোগের চিকিৎসা রোগের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে।

মনে রাখবেন: কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। তাই নিয়মিত চেকআপ করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা খুবই জরুরি।