কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্তকে পরিশোধন করে, অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফলে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে জীবনযাত্রার পরিবর্তন
কিডনি রোগ প্রতিরোধে জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আনলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
- ফল ও সবজি: বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- পটাশিয়াম: কলা, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, টম্যাটো ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পটাশিয়াম গ্রহণ করতে হবে।
- ফসফরাস: মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম ইত্যাদিতে ফসফরাস থাকে। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফসফরাস গ্রহণ করতে হবে।
- লবণ: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই লবণযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান: দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করতে হবে।
- শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার ইত্যাদি ব্যায়াম করা যেতে পারে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা কিডনি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপান কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- ওষুধ সেবন: যে কোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। কিছু ওষুধ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- নিয়মিত চেকআপ: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ থাকলে নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত।
কিডনি রোগের লক্ষণগুলি
প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যখন রোগটি এগিয়ে যায়, তখন নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
- প্রস্রাবের পরিমাণ বাড় বা কম হওয়া
- প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেওয়া
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া
- পা ফুলে যাওয়া
- শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়া
- ক্লান্তি অনুভব করা
- বমি বমি ভাব
- খিদের অভাব
- চুল পড়া
- ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
কিডনি রোগের কারণগুলি
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- কিডনির সংক্রমণ
- কিডনির পাথর
- পলিসিস্টিক কিডনি রোগ
- অটোইমিউন রোগ
- কিছু ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিডনি রোগের চিকিৎসা
কিডনি রোগের চিকিৎসা রোগের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে।
মনে রাখবেন: কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। তাই নিয়মিত চেকআপ করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা খুবই জরুরি।