গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মহিলা গর্ভাবস্থার সময় প্রথমবারের মতো উচ্চ রক্তশর্করা (গ্লুকোজ) মাত্রার সম্মুখীন হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
কেন হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস?
গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিবর্তনের ফলে রক্তে শর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে।
কারা ঝুঁকিতে থাকে?
- আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকলে: যাদের আগে থেকেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়।
- পরিবারে ডায়াবেটিস থাকলে: যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- বেশি ওজন হলে: অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- আগের গর্ভাবস্থায় বড় বাচ্চা হলে: আগের গর্ভাবস্থায় যাদের বড় বাচ্চা হয়েছিল, তাদের আবার গর্ভবতী হলে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) থাকলে: এই সব রোগ থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ
অনেক ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা
- প্রায়শই প্রস্রাব করা
- অস্পষ্ট দৃষ্টি
- ধীরে জখম সারা
- অতিরিক্ত ক্ষুধা
- অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জটিলতা
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে তা মাতা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন:
- মাতার জন্য: উচ্চ রক্তচাপ, প্রসবকালীন জটিলতা, প্রসবের পর ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি।
- শিশুর জন্য: বড় আকারের শিশু জন্ম, জন্মের সময় সমস্যা, এমনকি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকতে পারে, জন্মের পর রক্তে শর্করা কমে যাওয়া, ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি।
চিকিৎসা
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শর্করাযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
- ব্যায়াম: নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার ইত্যাদি ব্যায়াম করা।
- রক্তের শর্করা পরীক্ষা: নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা।
- ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ দিতে হয়।
প্রতিরোধ
গর্ভাবস্থার আগে থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন:
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
মনে রাখবেন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস একটি গুরুতর সমস্যা। তাই যদি আপনি গর্ভবতী হন, তাহলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করান।