জ্বর আমাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে। তবে, জ্বরের কারণ শুধুমাত্র সংক্রমণই নয়, আরও অন্যান্য কারণও থাকতে পারে।
জ্বরের কারণ
- সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী দ্বারা সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ সর্দি, ফ্লু, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি।
- দাহ: শরীরের কোনো অংশে আঘাত বা দাহ হলে জ্বর হতে পারে।
- ক্যান্সার: কিছু ধরনের ক্যান্সারও জ্বরের কারণ হতে পারে।
- অটোইমিউন রোগ: যেমন লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।
- অন্যান্য: কিছু ওষুধ, বিষক্রিয়া, হরমোনজনিত সমস্যা ইত্যাদিও জ্বরের কারণ হতে পারে।
সংক্রমণের রোগ নির্ণয়
সংক্রমণের রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস, লক্ষণ এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করেন। প্রয়োজনে নিম্নলিখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হতে পারে:
- রক্ত পরীক্ষা: সংক্রমণের ধরন এবং তীব্রতা নির্ণয় করতে।
- মূত্র পরীক্ষা: মূত্রনালীর সংক্রমণ নির্ণয় করতে।
- দুধের নমুনা: স্তন্যপান করানো শিশুর ক্ষেত্রে দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হতে পারে।
- চিত্রগ্রহণ পরীক্ষা: ফুসফুস, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গের সংক্রমণ নির্ণয় করতে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অতিরিক্ত বা ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রোধ গড়ে তুলতে পারে, যাকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে। এটি সংক্রমণ চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ
- হাত পরিষ্কার রাখা: সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
- টিকা: ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়া।
- অ্যান্টিবায়োটিক সঠিকভাবে ব্যবহার: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।
জ্বরের ব্যবস্থাপনা
জ্বরের ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে জ্বরের কারণ এবং তীব্রতার উপর। সাধারণত নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরকে বিশ্রাম দিয়ে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার সুযোগ দেওয়া।
- পর্যাপ্ত তরল পান: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল খাবার খাওয়া।
- জ্বর কমানোর ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর কমানোর ওষুধ সেবন করা।
- গরম পানি দিয়ে গোসল: শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- হালকা পোশাক পরা: শরীরকে ঠান্ডা রাখতে হালকা পোশাক পরা।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
- জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
- জ্বরের সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন, মাথা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থাকলে।
- জ্বর খুব বেশি হলে।
- শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে।
মনে রাখবেন: জ্বর একটি লক্ষণ মাত্র, রোগ নয়। জ্বরের মূল কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা খুবই জরুরি।