ডায়াবেটিস: লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস কী?

ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যাতে শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ আমাদের শরীরের প্রধান জ্বালানি। ইনসুলিন নামক একটি হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের উৎপাদন কম হয় বা শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিসের ধরন

মূলত দুই ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে:

  • টাইপ 1 ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয়।
  • টাইপ 2 ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে কিন্তু সেটি সঠিকভাবে কাজ করে না। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এবং জীবনযাত্রার অভ্যাসের সাথে যুক্ত। তবে, আজকাল এই ধরণের ডায়াবেটিস অল্প বয়সেই দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল খারাপ খাদ্যাবাস, অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস এবং স্থুলতা।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা
  • হঠাৎ ওজন হ্রাস
  • ক্লান্তি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষত সারা
  • হাত ও পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি

ডায়াবেটিসের কারণ

  • জিনগত কারণ: পারিবারিক ইতিহাস ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ।
  • জীবনযাত্রার অভ্যাস: অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
  • অন্যান্য রোগ: হাই ব্লাড প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি রোগ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডায়াবেটিসের জটিলতা

দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থাকলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • হৃদরোগ
  • স্ট্রোক
  • কিডনির রোগ
  • নার্ভের ক্ষতি
  • চোখের সমস্যা
  • ফ্যাটি লিভার
  • ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি বা চর্মরোগ
  • জীবাণু সংক্রমণের পুনরাবৃত্তি

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা যায় না, তবে জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন করে এর ঝুঁকি কমানো যায়:

  • সুষম খাদ্য: শাকসবজি, ফল, এবং পুরো শস্য খান। চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার কমান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মধ্যম তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
  • ধূমপান বর্জন: ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত চেকআপ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত চিকিৎসায় রয়েছে:

  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
  • ওষুধ: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।
  • ইনসুলিন: টাইপ ১ ডায়াবেটিসে  অবশ্যই  ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা    করতে হবে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে, প্রয়োজনে ইন্সুলিন ব্যবহার করতে হয়।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

যদি আপনার ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।