লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে, খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু যখন লিভারের কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তখন লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার ক্যান্সারের কারণ
লিভার ক্যান্সারের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস।
- হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস: এই ভাইরাসগুলি লিভারকে দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমিত করে রাখতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- অ্যালকোহল: অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ফ্যাটি লিভার রোগ: যখন লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে, তখন ফ্যাটি লিভার রোগ হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটি লিভার রোগ থাকলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অন্যান্য কারণ: লিভার ক্যান্সারের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে আফলাটক্সিন নামক একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিছু ধরনের জিনগত ব্যাধি এবং কিছু ধরনের ঔষধের দীর্ঘদিন ব্যবহার।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ
লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে রোগটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
- পেটে ব্যথা
- ওজন কমে যাওয়া
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
- বমি
- হলুদ বর্ণ
- পায়ে ফোলা
লিভার ক্যান্সারের নির্ণয়
লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, যেমন:
- রক্ত পরীক্ষা: লিভারের কার্যকারিতা মাপার জন্য
- আল্ট্রাসাউন্ড: লিভারের ছবি তোলা
- সিটি স্ক্যান: লিভারের বিস্তারিত ছবি তোলা
- এমআরআই: লিভারের বিস্তারিত ছবি তোলা
- বায়োপসি: লিভারের একটি ছোট টুকরো নিয়ে পরীক্ষা করা
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগীর স্বাস্থ্য, ক্যান্সারের ধরন এবং পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। সাধারণত এই রোগের চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- সার্জারি: ক্যান্সারযুক্ত অংশ অপসারণ করা
- রেডিওথেরাপি: রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা
- কেমোথেরাপি: ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা
- লিভার ট্রান্সপ্লান্ট: ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকে একটি সুস্থ লিভার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা
প্রতিরোধ
লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
- হেপাটাইটিস বি ও সি ভ্যাকসিন: এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন নিন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
- মদ্যপান পরিহার: অতিরিক্ত মদ্যপান লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
উপসংহার:
লিভার ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করলে এটি সুচিকিৎসাযোগ্য। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মনে রাখবেন:
- এই তথ্যটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।
- কোনো ধরনের রোগের জন্য সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।